মলয় দে নদীয়া :- ১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ সালে বাংলাদেশের পাবনা জেলায় মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করলেও ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা নদীয়ার শান্তিপুরে, স্কুলের পড়াশোনাও ওখানেই।
শান্তিপুরের কৃতি সন্তান কাশি কান্ত মৈত্র বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত, তিনবারের মন্ত্রী কলকাতা হাইকোর্টের অভিজ্ঞ আইনজীবীর এবছর ৯৮ তম জন্মদিবস কৃষ্ণনগরে পালিত হলেও, ভুলেছে শান্তিপুর। এ বিষয়ে পৌরসভা থেকে বিধায়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে ক্লাব বারোয়ারি কারোরই কোনো উদ্যোগ দেখা গেলোনা। বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী জানান প্রতিবেশী এবং পারিবারিক সম্পর্ক, আগামীতে খেয়াল রাখব। সাংসদ বলেন স্থানীয় প্রশাসনের খেয়াল রাখা উচিত ছিল পৌরসভায় ক্ষমতায় আসলে নিশ্চয়ই পালন করব।
কৃষ্ণনগরের পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্র স্মৃতি সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র প্রতিবছরের মতো এবারেও আয়োজন করেছিলেন তাঁর স্মৃতিচারণা। যেখানে দুস্থদের বস্ত্র বিতরণ এবং বিশেষভাবে সক্ষম এক শিশুকে হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়। তবে ওই অনুষ্ঠানে , বর্তমান মৈত্র পরিবারের বা অন্য কোনো আত্মীয়কে দেখা যায়নি। তবে তাঁর স্বরচিত একটি কবিতা তার কন্যা পাঠিয়েছিলেন আর তা পাঠ করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শান্তিপুর মরমী তাঁর সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনাবলী নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন সম্প্রতি। তবে উপস্থিত ছিলেন না শান্তিপুরের কেউই। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এ প্রজন্মের কাছে এভাবেই হারিয়ে যাবে অতীতের গর্বের স্বর্ণোজ্জ্বল দিনগুলি।
তাঁর পিতা পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্র প্রখ্যাত সংসদ ও ভারতের সংবিধানের অন্যতম রচয়িতা।
কাশি বাবুর বিদ্যালয় শিক্ষা শান্তিপুরে, কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতিতে স্নাতক এবং আইন পাস করেন। আমৃত্যু তিনি কলকাতার উচ্চ ন্যায়ালয়ের স্বনামধন্য আইনজীবী হিসেবে সু পরিচিত।
ছাত্রজীবনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের বিশেষত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সুভাষ বাদী ছাত্রসংগঠন যোগদান ১৯৪৫ সালে। এরপর ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্য পরবর্তীতে প্রজা সোস্যালিস্ট পার্টির সু সংগঠক এবং সুবক্তা। ১৯৭১ সালে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ডাকে কংগ্রেসে যোগদান।
মার্কসবাদ সমাজবাদ সুভাষ বাদ ছাড়াও কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন লেখায় জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালের প্রজা সোশালিস্ট পার্টির হয়ে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে নির্বাচিত হয়ে বিধানসভায় প্রবেশ। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পাঁচবার নির্বাচিত হন তিনি যার মধ্যে ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায়, ১৯৭১ সালে এবং ১৯৭২ সালেও বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীত্বর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৭ সালে নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বিরোধী দলনেতা হন বিধানসভার। ১৯৮২ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে, অকস্মাৎ অপহৃত হন তিনি তারপরেই রাজনৈতিক সন্ন্যাস।
অসাধারণ রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারতেন তিনি, কবিতা লিখে তা সুর দেওয়ার নিদর্শনও পাওয়া যায়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতায়, রাজ্যে খাদ্য আন্দোলনে শহীদেদের পাশে, ১৯৭৮ সালে বন্যার্তদের পাশে, এবং পূর্ববঙ্গ থেকে বিতাড়িত হিন্দুদের পাশে থেকে তাদের সাহারা হয়ে উঠেছিলেন। শান্তিপুর কৃষ্ণনগর কলকাতাতে বেশকিছু দাতব্য চিকিৎসালয়, শিক্ষালয় আজও চালু রয়েছে।
২০১৬ সালে তাঁর চিকিৎসক পুত্র সুব্রত মৈত্রর মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। তারপরেও লকডাউন এর আগে পর্যন্ত ন্যায়ালয়ে এবং সমাজসেবায় নিত্য যোগাযোগ ছিল তাঁর।
২০২০ সালের ২৯ শে আগস্ট নদীয়া তথা বাংলা হারিয়েছিলেন ৯৬ বয়সী এক সুসন্তানকে।
ছবি: সংগৃহীত