নদীয়ার শান্তিপুরে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী মাঘিপূর্ণিমার দিন অন্নপূর্ণা পুজো

Social

মলয় দে নদীয়া:- রীতি মেনে বা চিরাচরিত প্রথা মেনে মাঘী পূর্ণিমা র দিন থেকে শান্তিপুর বড়ো বাজার অঞ্চলের শ্রী শ্রী অন্নপূর্ণা মাতা পুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে , এবছরও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি । জনশ্রুতি আছে , অন্নপূর্ণা দর্শন করলে অন্নের অভাব হয় না । বর্তমানে বড়ো বাজারের ব্যবসায়ীরা এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ী রা এই পুজোর আয়োজন করে থাকেন । অন্নপূর্ণা দেবীর দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থান করছেন দেবাদিদেব মহাদেব এবং বাম পার্শ্বে অবস্থান করছেন নারদ মুনি । ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র অনুযায়ী জানা যায় বাংলার ১২৬০ সালে মাঘী পূর্ণিমার দিন থেকে অন্নপূর্ণা মাতা পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে । শান্তিপুর পরিচয় গ্রন্থ সুত্রে জানা যায় শান্তিপুর গোপালপুর সাহা বাড়ীর হীরালাল সাহার প্রথম পুত্র কুঞ্জ বিহারী সাহা এই অন্নপূর্ণা মাতা পুজোর প্রতিষ্ঠাতা । ইনি নিঃসন্তান ছিলেন এবং দেবদেবীর ওপরে তার অগাধ বিশ্বাস ছিল । ব্যাবসায়িক সুত্রে প্রচুর ভূসম্পত্তি মালিক হবার কারণে তিনি এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন শান্তিপুর বড়ো বাজার অঞ্চলে । মোট পাঁচ দিন ধরে আয়োজিত এই পুজোয় তর্যা গান , যাত্রা পালা থেকে শুরু করে নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো । তত্কালীন সময়েই শান্তিপুর মালো পাড়া অঞ্চলে অবস্থিত একটি পুকুর দেবী অন্নপূর্ণার নামে দিয়ে গিয়েছিলেন কুঞ্জ বিহারী সাহা । তবে পুজো চলাকালীন বেশ কিছু অসাধু মানুষ তার উদ্দেশ্যে দুর্নীতির অভিযোগে এনেছিল , যদিও বিষয়টি বিতর্কিত , সেই সময় তিনি অপমানিত বোধ করে মায়ের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন ” মা আমি যেন তোমার আগে যেতে পারি ” , আর সেটাই হয়ে ওঠে বাস্তব । দুপুরে আহার সেরে বিশ্রাম নিতে যাওয়া টা তার কাছে শেষ বিশ্রামে পরিণত হয় । সেই সময় অন্নপূর্ণার বিসর্জনের আয়োজন চলছে । সেদিন মায়ের বিসর্জন আর সম্পূর্ণ হলো না , কারণ মৃতদেহ ফেলে রেখে মায়ের বিসর্জন অসম্ভব । সেদিনই দেবী অন্নপূর্ণা মাতার বিসর্জন না দিয়ে মন্দিরেই রেখে দেওয়া হয় । আবার সনাতন ধর্ম অনুযায়ী মায়ের ঘট নড়ে গেলে আর ভোগ রান্নার নিয়ম নেই ,সেই কারণেই পণ্ডিতদের মতানুযায়ী চড়ুই ভোগের প্রথা চালু হয় যেটা আজও চলছে । পুজোর শেষ দিন চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী মায়ের উদ্দেশ্যে মাছের ভোগ দেবার রীতি বলবৎ রয়েছে , তবে এই ভোগের মাছ সংগ্রহ করা হয় মালো পাড়ার অন্নপূর্ণা পুকুর থেকেই, আবার প্রতিদিন মায়ের ভোগ সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে নিবেদনের আগে পাঁচ জন ব্রাহ্মন কে খাওয়ানোর প্রথা রয়েছে, আবার মাতৃ মূর্তির বিসর্জনের আগে অন্নপূর্ণা পুকুরের চারিদিকে আগুন জ্বালানোর রীতি রয়েছে , এইভাবে মাতৃ মূর্তির বিসর্জন দেখার জন্য প্রচুর মানুষের জমায়েত ঘটে শান্তিপুর মালো পাড়ার অন্নপূর্ণা পুকুরের নিকট । তবে সূত্রের খবর মাঝে এই পুজোয় বেশ কিছুটা ভাঁটা পড়ে গেলেও পরবর্তীকালে হরিদাস দে , বিধুভুষণ দে , অন্নদা প্রসাদ বঙ্গ , মৃত্যুঞ্জয় দে , মুরারী মোহন পাল , বট কৃষ্ণ প্রামাণিক , হৃষিকেশ দে , নিতাই রায়, বৃন্দাবন দে , সুধাময় সাহা, অজিত দত্ত ,কমলেশ মাহাতো , কার্তিক সাহা , দিলীপ দে প্রমুখের নেতৃত্বে নর নারায়ণ সেবা বা মহোৎসব শুরু হয় এই অঞ্চলে । গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে, ভক্তশূন্য ভাবেই নিয়ম রক্ষার পুজো হয়েছিলো। তবে এবার আবার আগের মতন পুজোর জৌলুস ফিরেছে ভক্তবৃন্দ দের আগমনে।

Leave a Reply