মলয় দে নদীয়া:- পশ্চিমীঝঞ্ঝার প্রভাব এবং স্থল ঘূর্ণাবর্ত ও অক্ষরেখার প্রভাবে সাগর থেকে আগত জলীয়বাষ্পের দরুন ৪ঠা ফেব্রুয়ারী সারাদিন এবং ৫ই ফেব্রুয়ারীর ভোর পর্যন্ত রাজ্যের বেশিরভাগ জেলায় কয়েক দফায় কালবৈশাখী ধরণের বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়-বৃষ্টি জারি থাকবে বলে হাওয়া অফিস থেকে জানা গিয়েছিলো পূর্বেই। দক্ষিণবঙ্গে ৫ই ফেব্রুয়ারী দুপুর / বিকাল পর্যন্ত বজ্রবৃষ্টি চলতে পারে। ঝড়, বজ্রপাত, ভারী বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মূলত দুর্যোগ শুরু হয়েছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও নদীয়া জেলায় দুর্যোগের মাত্রা বেশি থাকবে বলে জানা গেছে। বাকি জেলাগুলিতেও বিক্ষিপ্তভাবে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি চলাকালীন (কিছু জায়গায় বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেও) ঝড়ের বেগ থাকবে ঘন্টায় ৩০ – ৫০ কিমি। যে সমস্ত জায়গায় মেঘ খুব শক্তিশালী তৈরি হবে সেখানকার ঝড়ের গতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৬০ – ৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সাথে তীব্র বজ্রপাত, অস্থায়ীভাবে প্রবল/অতিপ্রবল বৃষ্টি (ভারী বৃষ্টি) ও শিলাবৃষ্টি হবে।
বৃষ্টি-ঝঞ্ঝা শেষ হওয়ার ২ / ৩ দিন পরেই বিক্ষিপ্তভাবে পরবর্তী হালকা – মাঝারি বৃষ্টির স্পেল শুরু হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের হিমালয় সংলগ্ন জেলাগুলিতে ৭ই ফেব্রুয়ারী থেকে এবং দক্ষিণবঙ্গে আরো একবার বিক্ষিপ্ত কিছু জেলাতে ৯ই ফেব্রুয়ারী থেকে হালকা / মাঝারি বৃষ্টি শুরু হতে পারে। বৃষ্টি চলতে পারে ১১ / ১২ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। এরপরও ১৫ই ফেব্রুয়ারী থেকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
৪ঠা ফেব্রুয়ারীর রাত থেকে আবারও কমতে চলেছে রাতের তাপমাত্রা। পরবর্তী ২ দিনের মধ্যে আবারও জাঁকিয়ে শীত পরতে পারে। এবারে বেশিরভাগ জেলার তাপমাত্রা নামবে ১২ – ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত এবং কিছু জেলার তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। ১৩ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা উঠানামা করবে, অর্থাৎ কোনোদিন শীতের দাপট বাড়বে আবার কোনোদিন কমবে।
রাজ্যের বেশিরভাগ জেলায় রাত থেকে সকালের মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা দেখা যাবে। বিক্ষিপ্ত কিছু জায়গায় ঘন কুয়াশা দেখা যেতে পারে। শনিবার থেকে কুয়াশার দাপট বাড়বে। রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলের আকাশ হালকা থেকে আংশিক মেঘলা রয়েছে। ঝঞ্ঝার দরুন ৫ই ফেব্রুয়ারীর সকাল পর্যন্ত রাজ্যের অধিকাংশ জেলার আকাশ আংশিক থেকে সম্পূর্ন মেঘলা থাকবে।
একটি শক্তিশালী পশ্চিমীঝঞ্ঝা লাদাখ ও হিমাচলপ্রদেশ সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থান করছে। এর প্রভাবেই ৪ঠা ফেব্রুয়ারি থেকে পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্ব ভারতে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি চলছে। আসন্ন সরস্বতী পূজা উপলক্ষে কুমোর পাড়ায় সরস্বতী প্রতিমা প্রস্তুত একদম অন্তিম পর্বে, তার মধ্যে এই দুর্যোগ মৃৎ শিল্পীদের মাথায় হাত। অন্যদিকে সবেমাত্র গতকাল বিদ্যালয় খোলার ফলে সরস্বতী পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিলো স্কুল পড়ুয়ারা , আকাশের মতোই তাদেরও মুখ ভার। সপ্তাহ ভোর এই দুর্যোগের ফলে চাষের মাঠেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা। পৌর নির্বাচন উপলক্ষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাজনৈতিক উত্তাপের শুরুতেই জল ঢেলে দিলো প্রকৃতি।