রটন্তী কালী পুজো ! রটন্তী কালী পুজোর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছু কথা

Social

মলয় দে নদীয়া : রটন্তি কালী পূজোর প্রেক্ষাপটে জেনে নেওয়া যাক এই পুজো বৃত্তান্ত । রটনা শব্দ টির থেকে রটন্তি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে । মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী কে রটন্তি চতুর্দশী বলা হয় । সারাবছর প্রত্যেক অমাবস্যায় বিভিন্ন কালী হলেও একমাত্র এই রটন্তি   কালী পুজো মাঘ মাসের চতুর্দশী অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ।

লোককথা অনুসারে শোনা যায় এদিনই দেবী ছিন্ন মসতার আবির্ভাব ঘটেছিল । দেবী পার্বতী তার সহচরী দের ক্ষুধা নিবারণের জন্য নিজ মুণ্ড ছেদ করে তৃধারায় রক্তবারি প্রকট করেছিলেন ।

অন্যদিকে শাস্ত্রমতে বলা হয় শ্রী কৃষ্ণ যখন প্রেমলীলায় রাধা মত্ত ছিলেন , সেই সময় একদিন দুপুরে গোপিনিরা তার বংশির আওয়াজ শুনে চমকে গিয়েছিলেন । গপিনীরা সেদিকে ছুটে গিয়ে সামনেই দেখেন ইস্টমূর্টি । রাধিকা যে স্বয়ং আদ্দ্যা শক্তি সেদিন সেটা বুঝতে পেরেছিলেন তারা । সেই দিনকে স্মরণ করেই এই বিশেষ তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় রটনতি কালী পুজো । মনে করা হয় যাদের জীবনে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা রয়েছে সেই সমস্যা গুলির থেকে মুক্তি পাবার তাগিদে তারা এই বিশেষ সময়ে এই মাতৃ মূর্তির আরাধনা করে থাকেন । দক্ষিণেশ্বরে র মন্দিরেও এই রটনতি কালী পুজোর আরাধনা যথেষ্ঠ আড়ম্বরের সাথেই অনুষ্ঠিত হয় ।
সনাতন ধর্মের শাস্ত্র অনুযায়ী পুরাকালে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই দৈত্য পৃথিবী জুড়ে ভয়ংকর ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল । দেবতারা এই দুই দৈত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন । সেই সময় দেবরাজ ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতারা আদ্যাশক্তি মা পার্বতীর তপস্যা করতে থাকেন , তখন দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাদের কাছে আবির্ভূত হন এবং দেবীর শরীরের কোষ থেকে অন্য এক দেবী সৃষ্টি হয় ,যেটা কৌশিকী নামে পরিচিত । দেবী কৌশিকী মা মহামায়ার দেহ থেকে নিঃসৃত হয়ে মহাকাল বর্ণ ধারণ করে , যেটা দেবী কালির আদি রূপ বলে ধরা হয় । যদিও তন্ত্র পুরান ও মহাকাল সংহিতের মতে মোট আট থেকে নয় প্রকার কালী মায়ের রূপ ভেদের ব্যাখ্যা রয়েছে । সেগুলি হলো দক্ষিণ কালিকা , সিদ্ধ কালিকা , গুহ্য কালিকা , শ্রী কালিকা , ভদ্রকালী , চামুণ্ডা কালিকা , শসা ন কালিকা , মহাকালী , কামকলা কালী , ধনো কালিকা , সিদ্ধিকালি ও চণ্ডিকা কালিকা প্রমুখ ।
কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণদেব একবার বলেছিলেন, ‘‘রটন্তী কালীপুজোর ভোরে দেখলাম দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্বর্গ দেবতারা নেমে এসেছেন স্নান করতে।
এ রকমই বেশকিছু পুজো আজও প্রচলিত আছে। নদীয়ার শান্তিপুর শ্যামচাঁদ মোড়ে এ রকমই এক পুজো বহু প্রাচীন তবে মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পরিবারের সদস্য শুভজিৎ দে নিজে কুম্ভকার পাল না হওয়া সত্ত্বেও অসাধারণ কালিমাতার মূর্তি তৈরি করে পুজো করে আসছেন বেশ কয়েকবছর যাবৎ।
পূজারী জানান প্রচন্ড শীতে প্রদীপের তাপ কালীমাতার উদ্দেশ্যে নিবেদন এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

Leave a Reply