মলয় দে নদীয়া:- ১৯৫০ সালের প্রথম প্রজাতন্ত্র থেকে ২০২২ সালের ৭৩ টি বছর পার হয়ে গেলেও, নদীয়ার ফুলিয়া চটকাতলার ৯৬ বছর বয়সী মানদাদেবীকে আজও ভরসা করতে হয় সেই চরকা কাটা উপার্জনের উপরেই। একাত্তরের দেশভাগের আগে ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা ছিলেন মানদা বসাক। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিবাহ। তার ঠিক কয়েক বছর পরে ইংরেজদের কাছ থেকে পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে ছিলেন বাংলাদেশের থেকেই। কিন্তু একাত্তরের দেশভাগের তিক্ত অভিজ্ঞতা আগেই এদেশের নদীয়ার ফুলিয়া চটকাতলায় ঠাঁই হয়েছিলো তাদের।
১৯৫০ সালের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের স্মৃতি আজও তাঁর চোখে-মুখে। ওদেশের বঙ্গবন্ধু হোক বা এদেশের জহরলাল নেহেরু। চরকা কেটেই তিন ছেলে এক মেয়ে বড় করে তোলা। বড় ছেলের বয়স এখন ৬৫ ছোট ছেলের ৪৩ । তিন বছরের ছোট ছেলে রেখে মৃত্যু হয় মানদা দেবীর স্বামীর। পেশায় তিনি ছিলেন তাঁত শ্রমিক। তিন ছেলে মেয়ের পরিবার ভেসে যেতে দেয়নি একমাত্র চরকা। সেসময়ের টিনের বেড়া এবং ছাউনি বেশ কয়েক জায়গায় ফুটো হয়ে গেলেও আজও একইভাবে রয়েছে। প্রদীপের তলায় থাকে অন্ধকার, তাই হয়তো বাড়ির একেবারে সন্নিকটে সুতোর মালিক বীরেন বসাক পদ্মশ্রী’ পেলেও , তার গগনচুম্বী মন্দিরের কিছুটা আলো রাতের অন্ধকারে কাটানো ছাড়া কিছুই স্বাদ পাননি মানদাদেবী। উন্নয়নের পিচ রাস্তা দোরগোড়ায় হলেও, তার বাড়িতে পড়েনি এতোটুকু ইঁট বালি সিমেন্ট। ছেলেদের একশ দিনের কাজ হোক বা মায়ের বার্ধক্য বিধবা ভাতা কিছুই কোনদিন পাওয়া যায়নি বলে জানালেন ছোট ছেলে কমল বসাক।
৬৫ বছর বয়সী বড় ছেলে শ্যামল বসাক অভিমানের সুরে বলেন, বেশ কয়েকবার সরকারি প্রকল্পে ঘরের কাগজপত্র জমা দিয়েও মেলেনি ফল। আজীবন চরকায় সুতো কেটে সংসার চালানো সত্বেও তাঁতি কার্ড বা তাঁত কিছুই মেলেনি। এ বিষয়ে পঞ্চায়েত সদস্য মন্টু বসাক জানান, ওই পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র, সরকারি ঘর পাওয়ার উপযুক্ত বেশ কয়েকবার কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও কি কারনে তা মঞ্জুর হচ্ছে না বুঝতে পারছিনা। পঞ্চায়েত প্রধান তপতী বসাক জানান, কেন এমন হচ্ছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।