মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ দিয়ে বড়ো সিদ্ধান্ত গ্রহণ হতে পারে বাড়তে পারে নূন্যতম বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ২১

Social

মলয় দে নদীয়া:- বাল্যবিবাহ রোধ করতে সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো, ১৮ বছরে নিচে কোন মেয়ের বিবাহ দেওয়া যাবে না । তার পেছনে অবশ্য সামাজিক কারণ কিছুটা থাকলেও, অসম্পূর্ণ শারীরবৃত্তীয় গঠনের কারণই ছিল অন্যতম। ডাক্তারি মতে ১৮ পূর্ণ হলে শরীর সম্পূর্ণ গঠন হয় এবং তবেই সন্তান ধারণের উপযুক্ত হতে পারেন একজন মহিলা।

১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় আইনে বাল্যবিবাহকে আইনবিরুদ্ধ করা হয়। যাই হোক, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক জমানায়, মেয়েদের আইনগত বিয়ের বয়স ১৫ এবং ছেলেদের ১৮ করা হয়। অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে মুসলমান সংস্থাসমূহের প্রতিবাদে, ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি ব্যক্তিগত বিধি শরিয়ত আইনসিদ্ধ হয়, যেখানে মেয়ের অভিভাবকের অনুমতিসাপেক্ষে বাল্যবিবাহতে সায় দেওয়া হোত। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এবং ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় সংবিধান গৃহীত হলে বাল্যবিবাহ আইনে নানা সংশোধন হয়। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আইনসিদ্ধ বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলেদের ২১ করা হয়। বাল্যবিবাহ বিরোধী আইনগুলি ভারতীয় আদালতসমূহে চ্যালেঞ্জ করা হয়, সঙ্গে কিছু ভারতীয় মুসলমান সংস্থা চাইছে নিম্নতম বয়স না-রেখে সেটা তাদের ব্যক্তিগত আইনে ছেড়ে দেওয়া হোক। বাল্যবিবাহ হল একটি সক্রিয় রাজনৈতিক বিষয় তথা ভারতের উচ্চতর ন্যায়ালয়সমূহে চলতি মামলাগুলির অধীনে সমীক্ষারত বিষয়ও বটে।তবে বর্তমানে কন্যা সন্তানদের বিয়ের বয়সে বদল ঘটাচ্ছে কেন্দ্র। যেটা বর্তমানে ১৮ বছর রয়েছে, সেটাকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সূত্রের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই নাকি অনুমোদন দিয়েছে ক্যাবিনেট। কন্যা সন্তানদের সঠিক বয়সে বিয়ে দেওয়া আইন রয়েছে, শোনা যাচ্ছে সেখানেও নাকি করা হবে সংশোধন। ২০২০, ১৫ ই আগস্ট লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন এই বিষয়টি।তিনি বলেছিলেন যদি কন্যা সন্তানদের অপুষ্টি থেকে বাঁচাতে হয়, তাহলে তাদের সঠিক সময়ে বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু, বাল্যবিবাহ নিষেধ আইন, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ও হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে সংশোধন করবে সরকার। এই কাজের সুপারিশ নাকি করছে নীতি আয়োগের জয়া জেটলির নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্স। এইযে টাস্কফোর্স এর সদস্য হিসেবে রয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব, নারী ও শিশু উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষা, স্কুল শিক্ষা ও সাক্ষরতা মিশন এবং বিচার ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।টাস্কফোর্স গঠন করার ঠিক ছয় মাসের মধ্যেই একটি রিপোর্ট পেশ করেছিল তারা। সেখানে তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রথম সন্তানের মা হওয়ার সময় একটি মেয়ের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১। যদি মেয়েদের বিয়ের বয়স বেশী বয়সে হয়, তাহলে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, শিশু অর্থ ব্যবস্থা সব কিছুর ওপরে দারুণ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এ বিষয়ে কলেজ পড়ুয়া মহিলারা জানান, একটা সময় দৈন্যতার কারণে কন্যা সন্তানের বিবাহের দায় এবং দুশ্চিন্তার কারণ ছিলো পিতা মাতার।

বর্তমানে মহিলারাও আত্মনির্ভর হবার স্বপ্ন দেখেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর ঠিক সেই কারণে ১৬ বছরের মাধ্যমিক ১৮ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ২১ বছর বয়সে স্নাতক হওয়ার পর চাকরি বা জীবিকাতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে থাকেন তাঁরা। বিবাহিত অবস্থায় স্বামী বা অবিবাহিত থাকলে অনেক ক্ষেত্রে পিতার কাছে গলগ্রহ হয়ে দাঁড়ানোর বদলে উপার্জনের মাধ্যমে পাশে বরং তাদেরই পাশে দাঁড়াতে পারেন। তাই এই সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত বাস্তবিক সুচিন্তিত যুগোপযোগী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply