বিশ্ব আদিবাসী দিবস! নদীয়ার দিশারী পৌঁছালো সুন্দরবনের কুমিরমারিতে গড়ে উঠল দুই জেলার আদিবাসী সম্পর্ক

News

মলয় দে নদীয়া:- বিংশ শতকের প্রায় শেষে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nation Organisation -UNO) আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমস্যা উপলব্ধি করে ১৯৯০ সালের ১৮ ই ডিসেম্বরের সভায় ১৯৯৩ সালকে “আন্তর্জাতিক আদিম জাতিবর্ষ” ঘোষণা করে এবং বলে যে সারা বিশ্বের আদিবাসীরা সামগ্রিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহায়তা পাবে। এই মর্মে ১৯৯৩ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় ৯ ই আগস্ট দিনটিকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১০ বছর অন্তর আদিবাসী উন্নয়ন ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে পর্যালোচনা করার অঙ্গীকার করে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ? আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। জীবনমানের বিচারে আদিবাসীরা নিম্নতম অবস্থানে রয়েছে। সাংবিধানিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের আদিবাসীরা সবচেয়ে বেশি শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত ও অত্যাচারিত। দেশের সরকারও উদাসীন। বর্তমান রাজ্যসরকারের আদিবাসী উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনার অভাবে আদিবাসীরা দ্রুত পিছিয়ে পড়ছে। এই সময় আদিবাসীরাও জীবন যন্ত্রণার চরম শিকার হচ্ছে। সমাজের সকল ক্ষেত্রে আদিবাসীরা আজও ব্রাত্য। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী সাধারণ মানুষ যারা আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করছেন তারা বিভিন্ন আদিবাসী উন্নয়ন মঞ্চ বা আদিবাসী উন্নয়ন সমিতি গঠন করে আদিবাসীদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে চলেছেন। তারা সরকারী ও বেসরকারী ভাবে আদিবাসীদের জন্য কিছু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন কিছু সংরক্ষণের দাবী দাওয়া সংগঠিত করছেন। যেমন- প্রাকৃতিক সম্পদে আদিবাসীদের সহজাত অধিকার কায়েম রাখা, সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব না করা, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষণ নীতি কঠোর ভাবে কার্যকরী করা, আদিবাসী ছাত্র ছাত্রীদের সহজলভ্য শিক্ষাদানের ব্যবস্থা, রেগা প্রকল্পে আদিবাসীদের সম মজুরি প্রদানের ব্যবস্থা করা, জমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ না করা, আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন ও অত্যাচার বন্ধ করা প্রভৃতি। আদিবাসীদের অর্জিত অধিকার রক্ষা এবং অধিকার অর্জনের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এর আগে বিভিন্ন কর্মসূচী হয়েছে। বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে এ বছর ৯ ই আগস্ট ২০২১, সোমবার নদীয়া জেলার শান্তিপুরের চর-সারাগড় অঞ্চলে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও বিশ্ব আদিবাসী দিবসে ‘শিকড়ের টানে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নদীয়ার দিশারী পরিবার দিনটি উদযাপন করলো সুন্দরবন কুমিরমারি আইল্যান্ডে। শুধু নদীয়া নয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন কুমিরমারি আদিবাসী শিল্পীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেন। উদ্দেশ্য দুই জেলার (নদিয়া এবং সুন্দরবন দক্ষিণ ২৪ পরগোনা) আদিবাসী লোক সংস্কৃতির সেতু বন্ধন , আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা এবং বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যাতে ভবিষ্যতে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে কঠিন কাজ সম্পন্ন করা যায়।

যশে ক্ষতিগ্রস্ত এই আইল্যান্ড আজও জলের তলায়। নোনা জল জমিতে জমার ফলে আগামী দুই বছর চাষবাস বন্ধ তাই ইতিমধ্যে বহু মানুষ পেটের দায়ে আইল্যান্ড ছেড়ে ভিনদেশে গেছেন কাজের তাগিদে, দেশের বাকি শিশুদের মত এই আইল্যান্ডের শিশুরাও পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত। গ্রামবাসীদের অনুরোধে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এই দিন দিশারী তার আরো একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত করে কুমিরমারী আইল্যান্ডে । পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার সামগ্রী বিতরণ, করা হয় বৃক্ষরোপণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দিশারী র দিবা আবাসিক বিদ্যালয় কলতানের আরেকটি শাখা উদ্বোধন হয় এই কুমিরমারি আইল্যান্ডে।

Leave a Reply