পূর্ব গাজীপুর মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রমের মায়ের বাৎসরিক পূজা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

Social

অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :- গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্রের অধীন আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত পূর্ব গাজীপুর মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রমের ৮ ম বার্ষিক মায়ের পূজা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হল পূর্ব গাজীপুর মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম কমিটির পরিচালনায়।দু ‘ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূতায় গাঁথা ছিল শীতলা মায়ের পূজা, কালী মায়ের পূজা। এই উপলক্ষে ছিল অঙ্কন প্রতিযোগিতা,যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা। ছিল অতিথি বরণ, স্বাগত ভাষণ, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষজনদের বস্ত্র উপহার, মাঙ্গলিক দীপ প্রজ্জ্বলন ও ধর্মীয় আলোচনা, স্থানীয় শিল্পীদের সমন্বয়ে সঙ্গীতানুষ্ঠান ও নৃত্যানুষ্ঠান, আতস বাজীর আলোকমালা,সারা রাত্রি ব্যাপী দেবী মন্দিরে মায়ের পূজা পাঠ, হোম যজ্ঞ ও দেবারতি, অন্নকূট উৎসব, স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সৃজনশীল নৃত্যানুষ্ঠান ও সংগীতানুষ্ঠান, রাজকীয় বিচিত্রানুষ্ঠান।মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম এর চর্তুসীমার মধ্যে চারিদিকে আছে নারায়ণ মন্দির, শীতলা মায়ের মন্দির, কালী মন্দির,শিব মন্দির, শনি মন্দির। আছে কৃষ্ণ – সারথী ,কালীয়দমন দৃশ্য। যা প্রত্যেক দিন দেখতে পাওয়া যায়। আছে শিশুদের জন্য বিভিন্ন বিনোদন মূলক রাইড। প্রত্যেক দিন এলাকার কচিকাঁচা শিশুরা তাদের অভিভাবক – অভিভাবকদের সঙ্গে এই মন্দিরে এসে রাইড গুলিতে চড়ে আনন্দ উপভোগ করে। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক সমাজসেবী স্বপন মন্ডল বলেন ” আমতা – বাগনান সড়ক পথের ধারে পূর্ব গাজীপুরের এই জায়গাটা যেখানে বর্তমানে মায়ের মন্দির, এই জায়গাটি জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল।মৃত মানুষের শবদেহ সৎকার করার জন্য প্রয়োজন মতো জঙ্গলের কিছুটা জায়গা অস্থায়ী ভাবে পরিষ্কার করে শবদেহ সৎকার করা হত।এই জায়গাটি তখন শশ্মানে পরিনত হয়। ছোট বেলা থেকে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা জাগে ঐ জায়গায় কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ করার।আমি যত বড় হতে থাকি আমার সুপ্ত বাসনা আরো প্রকট হতে থাকে।বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একদিন গভীর রাতে মায়ের স্বপ্নাদেশ পাই। মা আমাকে বলে, ” তুই ঐ শ্মশানের জঙ্গল পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন করে ওখানে আমাকে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা। আমি ওখানে তোর মাধ্যমে পূজিতা হতে চাই ” ।

এরপর একদিন গভীর রাতে একটি ব্যানারে কার ও কোনো নাম না দিয়ে শুধুমাত্র একটা ফোন নাম্বার দিয়ে ‘ মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ও মন্দির নির্মাণ কল্পে মুক্ত হস্তে দান করুন “, এই আবেদন রেখে গাজীপুর গ্ৰামের কয়েকটি জায়গায় টাঙিয়ে দিই। সেই ব্যানার দেখে অনেক সহৃদয় ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ফোনে যোগাযোগ করেন। তারপর সেই সমস্ত সহৃদয় ব্যক্তিদের একদিন সভায় ডেকে, আমার স্বপ্নাদেশ পাওয়া ও আমার পরিকল্পনার কথা উপস্থিত সকলকে জানালে সকলেই এই পরিকল্পনায় সম্মত হয়।যে যার সাধ্যমত আর্থিক সহায়তা করেন মন্দির নির্মাণ কল্পে। সেই অর্থে ও আমার ব্যক্তিগত দানে জঙ্গলাকীর্ণ শশ্মানের জায়গা পরিস্কার – পরিচ্ছন্ন করে এই কালী মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় । আস্তে আস্তে অন্যান্য মন্দির ও চিল্ড্রেন পার্ক তৈরি করা হয়েছে। আগামী দিনে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, অতিথি নিবাস নির্মাণ, খেলার মাঠ তৈরি, কতকগুলি মহিলা ও পুরুষ পৃথক পৃথক প্রসবাগার ও শৌচাগার নির্মাণ, সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ সহ অন্যান্য উন্নয়ন মূলক কাজ করার ” । ‌ অন্নকূট উৎসবে পূর্ব গাজীপুর, গাজীপুর,সোনামুই, ফতেপুর,মহিষামুড়ি, নওপাড়া, উদং,খড়দহ,গোবিন্দচক, পার্বতীপুর,মোল্লারচক,তুলসীবেড়িয়া,খসনান,ভগবতীপুর, দেওড়া,রাণাপাড়া, আমতা সহ ষোল থেকে সতেরো টি গ্ৰামের প্রায় পনেরো হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। অন্নকূট উৎসব উপলক্ষে সড়ক পথে ও মন্দির প্রাঙ্গণে জনতার ঢল নামে। এলাকার অসহায় ও দুঃস্থ আড়াইশো জনকে বস্ত্র উপহার দেন পূর্ব গাজীপুর মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম কমিটি।

Leave a Reply