নদীয়ায় ঘুড়ি ওড়ানোর নাইলন সুতোয় গলায় আঘাত এক যুবক এবং এক শিশুর ! প্রতিবাদে  সরব এলাকাবাসী

Social

মলয় দে নদীয়া:-সদ্যমাত্র সোজা রথ শেষ হয়েছে, উল্টোরথ আসছে! রথের আগে পরে এবং রথযাত্রা এই এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনায় ভাসে শান্তিপুর সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকা। বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমদানি হয়েছে ঝঞ্ঝাটমুক্ত বিনামাঞ্জার নাইলন সুতো! দামে একটু বেশি হলেও, সহজে পচনশীল নয় এই সুতো ঘরে থাকে বহুদিন! অন্যদিকে মাঞ্জা দেওয়ার শ্রম বা সময় লাভ হয় ঘুড়ি প্রেমীদের, স্বভাবতই সাবেকি সুতির সুতো কে দূরে সরিয়ে একচেটিয়া বাজার দখল করেছে তীক্ষ্ণ ধার যুক্ত অত্যাধিক শক্ত নাইলন সুতো। কিন্তু এতদিন সমাজের একাংশের আনন্দের ফল নিরানন্দের কারণ হতো, বিভিন্ন চারাগাছ, হাঁস-মুরগি গবাদি পশুদের। যথেচ্ছ এবং ‌ একচেটিয়া ব্যবহারের ফলে, রাস্তাঘাট বাগান সহ প্রায় সর্বত্রই যত যত পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে এই সুতো। ক্রমেই তা প্রভাব বিস্তার করেছে মনুষ্যসমাজেও।

নদীয়ার শান্তিপুরে গতবছর একজনের কানের অংশ অপরজনের আঙ্গুল কেটে যায় এই সুতোয়, এবছর শুরু হয় ঘোড়ালিয়ার এক মাঝবয়সী কৃষকের, তার ঠোঁট কেটে ঝুলে যায়, রাস্তায় ঝুলতে থাকা থাকা নাইলন সুতোয়। তেরোটি সেলাই নিয়ে দীর্ঘ মাস কষ্ট ভোগ করে এখন কিছুটা সুস্থতার দিকে। গত ১১ই জুলাই রথের আগের দিন ভগবতী দাস রোডে, এক পাঁচ বছরের শিশু, স্থানীয় একটি মাঠে কেটে যাওয়া ঘুরি ধরতে গিয়ে, অপর দুই একটি শিশুর সঙ্গে ঘুড়ি নিয়ে টানাটানি সময়, পা কেটে রক্তাক্ত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তিনটি সেলাই পড়ে।

গতকাল অর্থাৎ ১৪ ই জুলাই সন্ধ্যে ছটা নাগাদ, শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীতলা পাড়ার ১৮ বছর বয়সি এক তরুণ যুবক স্কুটি চালিয়ে শান্তিপুর জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার পথে, রাস্তার উপরে গাছের থেকে ঝুলতে থাকা নাইলন সুতোয় গলায় বেঁধে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে শান্তিপুর হাঁসপাতালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে গোপাল পুরের বাসিন্দা শামীম শেখ তার সাড়ে তিন বছরের শিশুকে ঘুরতে নিয়ে বেরিয়েছিলেন মোটরসাইকেলের সামনে বসিয়ে, বাড়ি ফেরার পথে ভদ্রকালী এলাকায় হঠাৎ একটি ঝুলন্ত নাইলন সুতোর শেষ অংশ জড়িয়ে যায় তার শিশুর গলায়, বাঁহাত দিয়ে সততি সরানোর চেষ্টা করলে তার হাত কেটে যায়, ক্ষণিকের মধ্যে রেখে শিশুর গলা রক্তাক্ত! তড়িঘড়ি শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ছটি সেলাই পড়ে।
শান্তিপুরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সহৃদয় মানুষের ক্ষোভ উগরে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়! প্রশ্ন একটাই এত পরিমাণে সুতো বিক্রি হয়েছে প্রকাশ্যেই! থানার পক্ষ থেকে সামান্য মাইকিং এবং দু-একজন নাইলন সুতা বিক্রেতাকে ধরপাকড় !ক্ষণিকের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া এতেই কি নিয়ন্ত্রণ হবে আগামীর দুর্ঘটনা? কোথা থেকে আসছে এত সুতো? গণপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার কারণে, যেখানে ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য , কৃষকের ফসল নিয়ে যেতে পারছেন না ! দুর্ঘটনাকবলিত প্রত্যেকেই লিখিত অভিযোগ দেওয়া সত্বেও, পুলিশি উদাসীনতা এবং গাফিলতিতেই দায়ী করছেন সুশীল সমাজ। নিন্দার ঝড় গোটা শান্তিপুর জুড়ে।

Leave a Reply