মলয় দে, নদীয়া:- পেশাগতভাবে কুম্ভকার সম্প্রদায়ের নয়! এক অভাবী তন্তুজীবি পরিবারের ছেলে শুভজিৎ দের তৈরি প্রতিমা সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এর আগেও একাধিক শিল্পকর্মে পৌঁছেছে বিভিন্ন রাজ্যে তবে , দেশের বাইরে এই প্রথম! কানাডার প্রবাসী এক বাঙালি, শুভজিতের তৈরি একটি কালী মূর্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে আজ থেকে প্রায় দু মাস আগে অল্প কিছু এডভান্স দিয়ে অর্ডার দেন দুর্গা প্রতিমা বানানোর জন্য। কিন্তু এত দূরের পথ শুকনো মাটির প্রতিমা ভেঙ্গে যেতে পারে এই ভেবে, শুভজিৎ একটু বেশি খরচ হলেও ইপক্সি কম্পাউন্ড নামক এক প্রকার উপাদান দিয়ে এক মাস ধরে অসাধারণ মূর্তি গড়ে, তা বিভিন্ন রঙের এবং নিজে হাতে তৈরি অন্যান্য সাজের উপকরণে সুসজ্জিত করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে।
পিতা নবকুমার দে জানান, তাঁত বুনে এক ছেলে ও এক মেয়ে স্ত্রী নিয়ে সংসার চালাই কোনরকমে! ছোটবেলায় বুঝতে পারলেও ওর প্রতিভা বিকাশের কোনো রকম সুযোগ করে দিতে পারেনি! তবে নিজের সন্তান বলে নয় ওর শিল্পকর্ম আগামীতে দেশের বাইরে সমাদৃত হবে এ আত্মবিশ্বাস আমার ছিলো।
মা ছন্দা দে, বলেন পড়াশোনার ফুরসত পেলেই, আমার ময়দা মাখা অথবা কাদামাটি নিয়ে ও খেলতে ভালোবাসতো ছোটবেলায়। তখনই বুঝে ছিলাম ওর ঝোঁক কোন দিকে! কিন্ত সারাদিন তাঁত বুনে পরিশ্রম করা ওর বাবাকে, বলতে সাহস পায়নি ছেলেকে এ ধরনের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর জন্য।
স্ত্রী মমতা দে জানায়, দেড় বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে! শান্তিপুর এই আমার বাপের বাড়ি হওয়ার কারণে, ওর শিল্পকর্ম প্রতি আগ্রহের কারণেই এ বাড়িতে আসার সুযোগ হয়েছে। আমি এবং আমার শাশুড়ি মা ওর পরামর্শমতো বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করে থাকি, আপনাদের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে যদি সহৃদয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি, তাহলে ওর শিল্পীসত্তা বিকশিত হতে পারে।
শুভজিৎ জানায়, বাপ ঠাকুরদাদা কোনদিন ঠাকুর বানাতেন না আমাদের পরিবারে, আঁকতে ভালবাসতাম সেটাই আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছেন । এব্যাপারে আমার মা, অভাবের কারণে কখনও হীনমন্যতায় ভুগতে দেয়নি, বরং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন সর্বক্ষণ।তবে সরকারি সুযোগ মিললে বা কোনো সুহৃদয় মানুষের সহযোগিতা পেলে, একটি ওয়ার্কশপ গঠনের মাধ্যমে আমার মতন অনেককেই নতুন কর্মের দিশা দেখাতে পারি।