অভিজিৎ হাজরা:আমতা,হাওড়া :-
বিশ্ব আবহে করোনার অতিমারী’র প্রবল সংক্রমণে মানুষের জীবন ও জীবিকা ওষ্ঠাগত। বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা উদ্বিগ্ন , চিন্তিত এবং আতঙ্কিত ও বটে । ‘ঐতিহাসিক মে দিবস’ (১লা মে) যা সমগ্র বিশ্বেই পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে, যা এবারের প্রেক্ষিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
করোনা এখন জনজীবনে বিশেষত: শ্রমজীবী পরিবারে- মুখের গ্রাসাচ্ছাদনে দারিদ্র্যের দৈন্যতাকে ক্রমশ: প্রকট করে তুলছে। গত বছরের মতো এবারও পরিযায়ী শ্রমিক দের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়নি এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর লজ্জা। শ্রমজীবী এইসব পরিযায়ী শ্রমিক দের কান্না -ঘাম -আর রক্তে পৃথিবীর ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী দেশগুলির বাড়বাড়ন্ত। আমরা জানি যে, আমেরিকা ও ইউরোপের ধনবাদী দেশগুলি- এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার দেশগুলো থেকে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করে নিজেদের মুনাফা কে স্ফীত করেছে। অনেকেই জানেন যে, ইউরোপীয় দেশ গুলির ‘ত্রিকোণ বাণিজ্য নীতির ‘ প্রভাবে, পনের শতকে ভারতসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ধর্মীয় উন্মাদনা য় শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে কম সংঘাত-সংঘর্ষ হয়নি। তার উপর সপ্তদশ শতকে ‘স্পিনিং জেনি ‘ আবিষ্কারের পর শিল্প বিপ্লবের সূচনা পরপরই বিশ্বের বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলির মুনাফা আরো বেশী বাড়তে থাকে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের সস্তা শ্রমকে ক্রয় করে তাদের আরো বেশি শোষণ এবং পিষ্ট করে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় তাদের ক্ষমতার বাইরে স্বল্প মজুরিতে বেশি পরিশ্রম করানো হতো। সেই প্রেক্ষিতে শ্রমজীবী মানুষের উত্তাল তরঙ্গ বিক্ষোভে কেঁপে উঠলো আমেরিকা। ১৮৮৬ সালের ১লা মে উত্তাল শ্রমিকেরা মিলিত হল আমেরিকার শিকাগো শহরের ‘হে মার্কেটে’। শ্রমজীবীদের সেই প্রতিবাদী মিছিলের ওপর চলল পুঁজিপতির দালাল পুলিশের নির্বিচারে লাঠি ও গুলি। কয়েকজন শ্রমিক নেতার ফাঁসি হলো। আজও দুনিয়ার দেশে দেশে যেখানে মুক্তি আন্দোলন সেখানেই স্মরণ করা হয় ঐতিহাসিক মে দিবসের সেইসব শ্রমিকদের।
ইতিমধ্যে শ্রমিকদের মর্যাদা,
সমকাজে সম মজুরি প্রভৃতির জন্য দেশে দেশে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন (Trade Union) তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) জেনিভা থেকে তারাও সারা পৃথিবীর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বর্তমান বিশ্বে এই তীব্র অতিমারীতে অসংগঠিত ও বেসরকারি ক্ষেত্রের শ্রমজীবী তথা পরিযায়ী শ্রমিকদের যাদের কোনো বিকল্প কর্মসংস্থান নেই তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী বিকল্প সংস্থানের ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই সুনিশ্চিত করতে হবে আজকের এই মে দিবসের প্রাক্কালে।