দেবু সিংহ, মালদা: ম্যুরাল আর্টে দিগন্ত দেখাতে চলেছে মালদার ২ ভাই। শুধু জেলা নয়, রাজ্যে একমাত্র তাঁরাই এই শিল্পের পথ প্রদর্শক বলে দাবি তাঁদের। এখনও রাজ্যের সেই অর্থে প্রচার নেই তাঁদের এই শিল্পের। তাঁদের তৈরি সৃষ্টি যদিও ভিনরাজ্যে বিক্রি হয়ে থাকে। এমনকী এই শিল্পের যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে আসতে হয় দিল্লি থেকে। এমনই প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়িতে বসে নতুন দিশা দেখাতে চলেছেন তাঁরা। চোখে একরাশ স্বপ্ন অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও একদিন ছড়িয়ে পড়বে তাঁদের সৃষ্টি। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর অগাধ বিশ্বাস। তিনিই পারেন তাঁদের এই ম্যুরাল আর্টকে তুলে ধরতে। বাজারও করতে পারেন। যদিও রাজ্য সরকার পরিচালিত হস্তশিল্প মেলায় তাঁরা একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। জাতীয় স্তরে গিয়ে আটকে যাচ্ছেন বয়সের কারণে। এখনও তাঁরা ৩০-র কোঠায় রয়েছেন।
২ ভাই সঞ্জয় হালদার(২৮) ও অচিন্ত্য হালদার(২৫)। শহর থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে বামনগোলা থানার মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের নালাগোলার মাহিনগরে বাড়ি তাঁদের। দাদা সঞ্জয় ভিন রাজ্যে মজুরের কাজে যান কিশোর বয়সে। সেবার দিল্লিতে কাজে গিয়ে এই শিল্প তাঁর নজরে আসে। কোনও রকমে কারখানায় সুযোগ পেয়ে কাজ শিখতে শুরু করেন। হাতেকলমে ছবি আঁকাও শেখেন নি কোনও দিন। সেখানে গিয়ে নিজে থেকে পেন্সিলের ছোঁয়ায় বেরিয়ে আসে স্কেচ। তারপর চলে ম্যুরালের কাজ। ধীরে ধীরে কারিগর হয়ে ওঠেন। তারপর কাজের চাপ সামলাতে না পেরে ভাই অচিন্ত্যকে ডেকে পাঠান দিল্লিতে। সেখানে জমে ওঠে তাঁদের কাজ। এরপর ২ ভাই মিলে ফিরে আসেন মালদার বাড়ি। ইচ্ছে, এ রাজ্যে এই শিল্পকে ছড়িয়ে দেওয়া। নালাগোলায় নিজেরা কারখানা তৈরি করে চলে কাজকর্ম। ইতিমধ্যে এলাকার অনেকেই সেখানে কাজ শিখছেন। অনলাইনে কাজের অর্ডার নিতে হয়। তাদের হাতের কাজ ইতিমধ্যে মুম্বাই, ব্যাঙ্গালুরু, হাইদ্রাবাদ, চন্ডীগর, জম্বু-কাশ্মীর, দিল্লি, লক্ষ্মৌ, দেরাদুন-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বড় বড় শহরে গেছে। জানা গেল, তাঁদের তৈরি সিলিং নক্সার কাজ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে লুধিয়ানায়।
সাধারণ প্লাইবোর্ডের ওপর বিভিন্ন নক্সা রিলিফের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। তারপর রঙ করে প্রাণ ফিরিয়ে আনা হয়। তেল রঙ থেকে ব্রাশ, সেলোফেন পেপার-সহ সব আসে দিল্লি থেকে। এ রাজ্যের কোথাও এই সব আলাদা ধরণের সরঞ্জাম পাওয়া যায় না। মধুবনী ও মুঘল ঘরানার আর্টের ছোঁয়া রয়েছে তাঁদের ম্যুরাল আর্টে।
সঞ্জায়, অচিন্ত্যরা বলেন, ‘আমরা চাই এই রাজ্যে বাজার করতে। কারণ বিভিন্ন রাজ্যে দেদার চাহিদা রয়েছে এই শিল্পের। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তিনি ঠিক তুলে ধরার ব্যবস্থা করবেন। এমনিতে আমরা সরকারি উদ্যোগে হওয়া জেলা ও রাজ্য হস্ত শিল্প মেলাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’