শান্তিপুরে গণেশ জননী মাতার পুজো! জেনে নিন সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য

Social

মলয় দে, নদীয়া : প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও শুরু হলো নদীয়া জেলার শান্তিপুর কাঁসারি পাড়ায় গণেশ জননী মাতৃ মূর্তির আরাধনা । দুর্গা পুজো যেমন বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব , মেতে ওঠেন প্রত্যেকেই । ঠিক তেমনই শান্তিপুর শহর অন্তর্গত এই কাঁসারী পাড়া অঞ্চলের প্রধান উৎসব গণেশ জননী পুজো কে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীদের উন্মাদনা প্রতিভাত হয় ।

শান্তিপুরের ইতিহাসের সূত্র ধরে জানা যায় অন্নপূর্ণা পুজো থেকেই গণেশ জননী পুজোর সৃষ্টি । এক সময় শান্তিপুরে সুবর্ণ বণিক ও কংস বণিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের যৌথ উদ্যোগে মাতা অন্নপূর্ণা পুজোয় নেতৃত্ব দিতেন এবং পুজো পরিচালনা করতেন । কিন্তু আনুমানিক দেড়শো বছর আগে অন্নপূর্ণা পুজো উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত একটি যাত্রা পালাকে কেন্দ্র করে সুবর্ণ বণিক অর্থাৎ স্বর্ণ শিল্পী এবং কংস বণিক অর্থাৎ কাঁসার পিতল শিল্পীদের মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠে । অন্নপূর্ণা পুজোর তিনদিনের মাথায় কংস বণিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা ওই পুজো কমিটি থেকে বেরিয়ে এসে এই গণেশ জননী মাতা পুজোর প্রচলন করেন ।
আনুমানিক ১৩১৬ বঙ্গাব্দ থেকে নিমু দত্ত, ইন্দু দত্ত , মুরারী দত্ত, গণেশ নাথ প্রমুখের নেতৃত্বে এই পুজোর শুভ সূচনা ঘটে । তবে জনশ্রুতি আছে , কংস বণিক সম্প্রদায়ের দুই ভাই গোকুল নাথ এবং যদু নাথ একবার কৃষ্ণ নগর মহারাজের দরবারে দুই শক্তিমান পুরুষ হিসাবে আমন্ত্রিত হয়ে রাজার দুই বীর পালোয়ানের সাথে শারীরিক শক্তি পরীক্ষার লড়াই এ অংশ গ্রহণ করেন এবং কৃষ্ণ নগরের রাজার দুই পালোয়ান কে পরাজিত করেন । এর ফলশ্রুতি হিসাবে মহারাজ খুশি হয়ে কাঁসা রি পুকুর , বিলের মাঠ, পুকুর পাড় লেন এবং বড়ো বাজারের মুখ পর্যন্ত রাস্তা তাদের দান করেন । পরবর্তী কালে কিছু জাইগা হস্তান্তরিত হয় বলেই সূত্রের খবর । আবার যদু নাথ এবং গোকুল নাথ — দুই ভাই ছিলেন নিঃসন্তান । সেই কারণেই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের সম্পত্তির অধিকার চলে আসে কংস বণিক সম্প্রদায়ের হাতে । পরবর্তীকালে যেটা মাতা গণেশ জননীর সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত হয় ।
মাতা অন্নপূর্ণার সাথে গণেশ জননীর বহু অংশে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় । এখানে দেবীর ডান পার্শ্বে মহাদেব এবং বাম পার্শ্বে নারদের অবস্থান । অন্যদিকে মায়ের কোলে ভগবান গণেশের অবস্থান । পাঁচ দিন ধরে চলে মায়ের আরাধনা । যথেষ্ট আরম্বরের সাথেই পূজিত হন মাতা গণেশ জননী । থাকে পূজা প্রাঙ্গণে যথেষ্ট ভোগের আয়োজন এবং প্রায় পুজোর প্রত্যেক দিনেই কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া । শান্তিপুরের বাইরে থেকে শিল্পীরা এসে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন । তবে পুজোর শেষে লগ্নে অর্থাৎ মায়ের পুজোর শেষে গণেশ জননী মাতার কোলে বিরাজমান গণেশকে কোলে নেবার রীতি রয়েছে উক্ত এলাকায় । অনেক নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভের বাসনায় পুজোর শেষে গণেশকে সস্নেহে নিজের কোলে তুলে নেবার রেওয়াজ রয়েছে । প্রতিমা বিসর্জনের দিন শান্তিপুরের সমগ্র রাজপথ আলোক সজ্জা ও বাজনা সহ মা কে পরিক্রমণ করিয়ে তারপর বিসর্জন দেবার রীতি রয়েছে ।

Leave a Reply