মলয় দে, নদীয়া:- অর্থপোডা পর্বের একটি ক্রাস্টাসিয় জলজ প্রাণী হলো কাঁকড়া। শক্ত খোলকের বহিঃকঙ্কাল আবৃত লম্বা দুটি দাঁড়া বিশিষ্ট এই সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর ৬৭৯৩ টি প্রজাতি সন্ধান মিলেছে এখনো পর্যন্ত। পৃথিবীর সব সাগরে এদের বসবাস হলেও, মিঠা জলের পাশে স্থলবাসী কাঁকড়া সন্ধানও পাওয়া যায়। নানান রং ও আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য মধ্যে পি কাঁকড়ার দৈর্ঘ্য কয়েক মিলিমিটার! আবার জাপানি মাকড়সা কাকড়ার একটি পায়ের দৈর্ঘ্য ১০০ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার! রেড কিং, ইউরোপিয়ান স্পাইডার , স্নোক্যাব, তাসমানিয়ান, হান্টস ম্যান, ক্যান্সার প্যাগুরাস, ফিডলার, কোকোনাট, এইরকমই নানা প্রজাতির কাকড়ার সন্ধান পাওয়া যায় স্থানভেদে। তবে বাংলায় সুস্বাদু চিংড়ি মাছের মতোই খাদ্যতালিকায় আকর্ষণীয় জায়গা করে নিয়েছে কাঁকড়া। মাংসের সমান প্রোটিন, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, রিবোফ্লাভিন, ফসফরাস নানান উপাদানে ভরপুর এই আমিষ খাদ্য উপাদানটি।
কানেকটিভ টিস্যু না থাকার কারণে মাংসল কাঁকড়া সহজপাচ্য, সেলিনিয়াম থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অভ্যর্থ পথ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। তবে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এবং এলার্জি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে নিয়মিত খাওয়া যায় না বলেই মত প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা। বিদেশে রপ্তানির কারণে ইদানিং অত্যন্ত লাভজনক মৎস্য প্রতিপালনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে এই চাষ। তবে সারাবছর নয় শুধুমাত্র শীতকালে গ্রামবাংলায় ছোট দেশি কাঁকড়া খাওয়ার চল প্রায় প্রতি বাড়িতেই।
মুসলিম ধর্মে নানা মতভেদ থাকলেও হিন্দুধর্মে বৌদ্ধধর্মে বা খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের খাদ্য হিসেবে কোন অসুবিধা নেই। বরং হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাকড়ার আরাধনা দেখা যায় সুন্দরবনে। রীতি মতন সাতদিন ধরে একসঙ্গে ৩২ জ্বালিয়ে রান্না করা হয় কাঁকড়ার নানান রেসিপি, এমনকি কাঁকড়া দেবীর নৈবদ্যে কাঁকড়া ও ডিম ভাজা প্রসাদ পাত খায় খায় গ্রামের সকলে। তবে ভারতবর্ষের বেশিরভাগ উৎপাদিত কাঁকড়া রপ্তানি হয় চীনে, বর্তমানে তা একেবারেই বন্ধ হওয়ায় এই পেশার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষের সমস্যা হচ্ছে।