মলয় দে, নদীয়া : নদীয়ার শান্তিপুর শহরে ভাঙ্গা রাসের মূল আকর্ষণ রাধিকা রাজা যাকে সাধারণভাবে আমরা রাই রাজা বলে থাকি । ভাঙ্গা রাসের নগর পরিক্রমা সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমতি পাবার পর বেশ কিছু বিগ্রহ পরিবার ভাঙ্গা রাসের দিন রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তি সহ শান্তিপুর শহরের রাজপথে নগর পরিক্রমায় সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে ইচ্ছুক । কিন্তু কোভিড ১৯ এর কারণে নগর পরিক্রমা এবার শুধুই নিয়ম রক্ষার । তাই এবছর রাস যাত্রা অনাড়ম্বরের । চৈতন্য চরিতামৃত ও শ্রী মোগভট সূত্রে জানা যায় দ্বাপর যুগে বৃন্দাবনে শ্রী কৃষ্ণ যখন সরোস গোপিনির সাথে রাস লীলায় মত্ত ছিলেন তখন স্বয়ং মহাদেব গোপিনির ছদ্মবেশে বৃন্দাবনে প্রবেশ করেন , কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ মহাদেবকে খুব শীগ্রই চিনে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন । মহাদেবকে দেখার পর, মুহূরতেই শ্রী কৃষ্ণ অন্তর্হিত হন । কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ ব্যাতিত রাসলীলা অসম্ভব , আর ঠিক সেই কারণেই সমস্ত গোপিনিরা রধিকাকেই রাজা সাজিয়ে মঞ্চস্থ করেন । সেই থেকেই রাধিকা রাজা বা রাই রাজার উদ্ভব ।
অন্যদিকে আরেকটি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ , শ্রীকৃষ্ণ যে মুহূর্তে রাসলীলা ভঙ্গ করে অন্তর্হিত হলেন , সেই মুহূর্ত বা সময়টি ভাঙ্গা রাস নামে সুপরিচিত । অর্থাৎ একদিকে ভাঙ্গা রাস ও অন্য দিকে রাই রাজা একই সন্ধিক্ষণ থেকেই উদ্ভব হয়েছিল । সেই কারণেই ভাঙা রাসে রাই রাজাকে নগর পরিক্রমা করানোর রীতি রয়েছে প্রায় প্রতিটি বিগ্রহ পরিবারেই । সুসজ্জিত রাই রাজাকে বিগ্রহ বাড়ির হাউদায় তোলার আগে তাকে বরণ করার রীতিও রয়েছে বিগ্রহ পরিবারগুলির পক্ষ থেকে । মূলত ব্রাহ্মণ পরিবারের কুমারী নাবালিকাকে সুসজ্জিত ও দৃষ্টি নন্দন সাজসজ্জায় সাজিয়ে তুলেই নগর পরিক্রমায় বের করার রীতি রয়েছে । শান্তিপুর শহরের প্রতিটি বিগ্রহ পরিবার যেমন — বড়ো গোস্বামী , পাগলা গোস্বামী, বাঁশ বুনিয়া গোস্বামী, চাক ফেরা , মদন গোপাল সহ আরো অন্যান্য বিগ্রহ পরিবারগুলি রাই রাজা সহ তাদের রাধাকৃষ্ণের নয়নাভিরাম যুগল মূর্তি সহ শোভা যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন ।
শান্তিপুর শহরে বেশ কিছু অ ব্রাহ্মণ পরিবারেরও রাই রাজা কে নগর পরিক্রমা করানোর রীতি রয়েছে । যেমন সাহা বাড়ি , পুট পুঁটি জিউ আবার আশানন্দ বারোয়ারি র শোভা যাত্রায় রাই রাজা দেখতে পাওয়া যায় ।
দ্বাপর যুগে স্বয়ং মহাদেব রাস ভেঙে ছিলেন , তিনি বলেছিলেন এক সময় রাস উৎসবের সূচনা করবেন । প্রভু অদৈতাচার্য্য ছিলেন মহাদেবের অবতার , তার নেতৃত্বেই কলি যুগে রাস উৎসব এর শুভ সূচনা ঘটে । এমনটাই জানাচ্ছেন রাধা মদন গোপাল জিউ এর কর্মকর্তা ও প্রভুপাদ শ্রী স্বরূপ গোস্বামী মহাশয় ।