মলয় দে নদীয়া :-গতকাল ছিল মহাষষ্ঠী , প্রাচীন হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী মহাসপ্তমীর দিন কলা বউ বা নব পত্রিকার স্নানের কথা উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ বুনিয়াদি বাড়ি এবং বারোয়ারি পূজা কমিটিগুলো মহা ষষ্ঠীর দিন মধ্যানের পরেই নব পত্রিকার স্নান নিয়ে মেতে ওঠেন । বলা যায় এই নব পত্রিকা বা কলা বউ এর স্নানের মধ্য দিয়েই দেবীর মূল পূজার শুভা রম্ভ ঘটে । দুর্গা মায়ের দক্ষিণ পার্শ্বে অর্থাৎ গণেশের পাশে একটি কাঠের জলচৌকি বা বেদীর ওপর লাল পাড় দেওয়া শারি ঘোমটা দিয়ে পরিধান করিয়ে সিঁদুরের চন্দনের প্রলেপ প্রদান করা হয় ব্রাম হন কর্তৃক ।
অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে আসলে কলা বউ বা নবপত্রিকা সিদ্ধিদাতা গণেশের স্ত্রী , কিন্তু পুরাণ বলছে এখানে মা দুর্গা বৃক্ষরূপী । অর্থাৎ নব পত্রিকা হলো মা দুর্গার অপর আর এক রূপ । পুরাণ মতে কৃষি প্রধান বঙ্গ সমাজে শষ্য দায়িনী ধরণী মাতার আরাধনায় হলো নব পত্রিকার পুজা।
কথিত আছে নব দুর্গার নয়টি রূপকে প্রাধান্য দিয়ে নয় টি বিভিন্ন ধরনের গাছের অংশ নিয়ে তৈরি হয় নব পত্রিকা । সেই নব পত্রিকায় যে সমস্ত গাছের অংশগুলি বা গাছগুলি থাকে সেগুলো হলো —- কলা গাছ, কালো কচু গাছ, মান কচু, হলুদ , জয়ন্তী , বেল , ডালিম ,অশোক ও ধান গাছ ।
গঙ্গা , পুকুর বা যেকোনো জলাশয়ে নবপত্রিকা কে স্নান করানোর জন্য লাগে অস্টকলস , সরিষার তেল , হলুদ , পঞ্চ রত্নের জল , পঞ্চ শস্য, পঞ্চ গব্য , বৃষ্টির জল , ডাবের জল ,তীর্থের জল, শিশির , বেশ্যা দ্বারের মৃত্তিকা , আখের রস ও চন্দন প্রভৃতি ।
নবপত্রিকার স্নান শেষে লাল পাড়ের নতুন শাড়ী পরিধান করিয়ে তিনটি মঙ্গল ঘটে আম্রপল্লব সহ সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক অঙ্কন করে একসাথে বাদ্য ও উলুধ্বনি দিয়ে বরণ করে মণ্ডপে মৃন্ময়ী মূর্তির দক্ষিণ পার্শ্বে স্থাপন করা হয় । মাতৃ মূর্তির সাথে মোট পাঁচ দিন ধরেই নব পত্রিকাকে পুজো করার রীতি বিদ্যমান রয়েছে প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী । এমনকি কৃত্তিবাসী রামায়নেও এই নবপত্রিকার উল্লেখ রয়েছে । সাধারণভাবে নব পত্রিকার পুজোর অর্থ হলো নয় রকমের বৃক্ষ সহ সবুজের জন্য প্রার্থনা করা , কৃষি প্রধান দেশে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ও উর্বর ধরিত্রীর জন্য প্রার্থনা করা এবং সর্বোপরি সমস্ত মনুষ্য জাতির স্বাস্থ্য ও রোগ মুক্তির জন্য এক বিশেষ প্রার্থনাই হলো এই নব পত্রিকার পুজো — বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অনেকে জ্ঞাত থাকলেও আবার অনেকেই অজ্ঞাত ।
বর্তমানে এই অতি মারীর প্রেক্ষাপটে সত্যিই মনুষ্য সমাজ থেকে রোগ মুক্তি ঘটবে তো ! কবে থেকেই বা বিলীন হবে দোর্দণ্ড প্রতাপ এই অদৃশ্য ভাইরাসের মারণ থাবা ? আর কবে থেকেই বা প্রকৃতির মুক্ত বাতাসে ওই সবুজের দিকে তাকিয়ে উন্মুক্ত চিত্তে উন্মীলিত অপলক দৃষ্টিতে আমাদের ঘ্রাণ শক্তির তীব্রতম প্রভাব ফেলতে পারবো ! একরাশ প্রশ্ন চিহ্নের সাথে বিস্ময় থেকেই যাচ্ছে ।