টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আগমনী উৎসবে উপহার পৌঁছে দিলো পরিবারের ব্রাত্য  “সুখনীড়” এ আশ্রিতদের

Social

মলয় দে নদীয়া:- নদীয়ার কৃষ্ণনগর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড একশন নেটওয়ার্ক (প্রান) পরিচালিত শহরের ৪নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত গৃহহীন আশ্রয় প্রকল্পের “সুখনীড়” । নিজের প্রতি মনোযোগী হয়েও সংসারের সকলের শখ আহ্লাদ পূরণ করার কর্মঠ পিতা, অথবা পরিবারের সকলকে রেঁধে বেড়ে গৃহস্থলীর সমস্ত কাজ দিনের পর দিন হাসিমুখে করে অভ্যস্ত দশভূজারুপি জন্মদাত্রী মা একসময় অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে বয়স জনিত কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়ে। সংসারের হয়ে ওঠে ব্রাত্য। কখনো বা সরাসরি কখনো বা বিভিন্ন অজুহাতে অপমানিত হতে হয় প্রতি পদে পদে! ক্ষোভে দুঃখে অভিমানে তারা হন সংসার ত্যাগী। আগে এই ধরনের মানুষ যেতেন বিভিন্ন ধর্মশালায়! সংসার বিতাড়িত এই মানুষগুলির ক্রমাগত সংখ্যা বাড়ায় এবং ধর্মশালা গুলিতে প্রকৃতধর্মের অভাবে জায়গা খুঁজতে থাকেন নিরিবিলিতে শান্তির একটু আশ্রয়! বৃদ্ধাশ্রম মধ্যে যেগুলো পরিচিত তা উচ্চবিত্তদের জন্য। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের জন্য নির্মিত কৃষ্ণনগরে এই “সুখনীড়”।

আগমনী উৎসব উপলক্ষে নতুন বস্ত্র নিয়ে শান্তিপুর বন্ধন এর পক্ষ থেকে গত শনিবার হাজির হন সেখানে। সদ্য পড়াশোনা শেষ করে যুবক হয়ে ওঠা অরিজিৎ সুমন মহিনুর বিক্রমরা হয়তো এখনো কর্মজীবনে প্রবেশ করেনি বলেই হয়তো সংসারের জটিল-কুটিল চিন্তা , মনুষ্যত্ব চাপা পড়েনি অর্থের প্রাচুর্যে, আবেগি মন কেঁদেছে মাতৃ-পিতৃ তুল্য সংসার পরিত্যক্ত মানুষগুলোর জন্য। এর আগেও একাধিকবার তারা এভাবেই এসে গল্প করে হেসে খেলে জন্মদিন পালন করে গেছেন অনেকে। হয়তো একদিন তাদের সঙ্গে থেকে কষ্ট লাঘব করা সম্ভব নয়! কিন্তু গর্ভ বা ঔরসজাতসন্তান রা নাইবা আসলো! কিন্তু সন্তান তুল্য এইরকম অনেকেই আসলে নতুন করে বাঁচার সাধ্য যায় কিছুটা এমনটাই জানালেন কৃষ্ণনগরের মান্তু চক্রবর্তী, বনগাঁর শিব কুমার গুপ্ত, তেহট্টর বিপাশা ভৌমিকের মত মা বাবারা। কেউবা সময় কাটান গল্প করে, কেউ বা বই পড়ে! তবে তিন বেলা আহার এবং আশ্রয়টুকু অশান্তি বিহীন! যেটার জন্য ছেড়েছিলেন ঘর। কেউ হাত খরচের টাকা জোগাড় করতে, বাঁধেন ঠোঙা, কেউ করেন পরের বাড়ীতে পরিচারিকার কাজ। কিন্তু আহার বাসস্থানের চিন্তা নেই তাদের তবে কিসের জন্য এখনও পরিশ্রম ?

চামড়া কুঁচকানো ছল ছল চোখে উত্তর আসে নাতিনাতনীর গুলোর হাতে কিছু দিতে পারলে মন ভালো লাগে! অনেকেই খোঁজখবর নেন না একেবারেই! যাদের মনুষত্ব এখনো জ্বলছে প্রদীপের সলতের এর মতো তারা কেউ কেউ আসেন বছরে এক-আধ বার। সংস্থাটির সবাই ছাত্র তাই টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এই রকম কাজে সামিল থাকে তারা । সংস্থাটির এই ভূমিকায় খুশী আবাসিকরা ।

Leave a Reply