সোশ্যাল বার্তা : সারা দেশ জুড়ে চলছে করোনা সংক্রমণ । বতর্মান এই কঠিন পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের যোগাযোগ অনেকটা কমে গেছে। বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা যে প্রাণখোলা পরিবেশের স্বাদ পেতো, যেভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে নিজেদের অনুভূতির আদান-প্রদান ঘটাতে পারতো সেটা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে বেড়ে চলেছে গার্হস্থ্য হিংসা, বাল্যবিবাহ, পাচারের মতো ঘটনা। আত্মহত্যার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে প্রতিদিন। এই অবস্থায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার মগরাহাট ১নং ব্লকের শেরপুর রামচন্দ্রপুর হাইস্কুল একটু অন্যরকম পরিকল্পনা গ্রহন করলো। নিজেদের ব্লকের তো বটেই আশপাশের কয়েকটি স্কুলকে নিয়ে গড়ে ফেললো একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নাম দেওয়া হলো ‘উদ্যোগী’।
স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্পের দ্বারা অনুপ্রাণিত এই বিদ্যালয় আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শুরু করেছে একসাথে পথচলা। রবীন্দ্র বালিকা বিদ্যাপীঠ, ঘোলা নোওয়াপাড়া হাই মাদ্রাসা, আমড়াতলা গোঁসাই দাস হাইস্কুল, সরাচী অম্বিকাচরণ হাইস্কুল, টেকপাঁজা হাইস্কুল, বেড়ামারা রামচন্দ্রপুর হাইস্কুল, আমতলা নিবেদিতা গার্লস, বেলোমনি গার্লস, ধামুয়া গার্লস, এই এতোগুলি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক /শিক্ষিকা অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে অনলাইনে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান চালু করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটাল ও নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির ছাত্রীরাও। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের কোনামালি সান্তারা দেবী হাইস্কুলও। গ্রুপে রয়েছেন ডায়মন্ড হার্বার হাসপাতালের মনোবিদ ও এক্সনএইডের ডিস্ট্রিক্ট কো অর্ডিনেটর।
রবিবার ২০শে সেপ্টেম্বর ‘উদ্যোগী’ র উদ্যোগে বসেছিল কেরিয়ার কাউন্সেলিং এর ওপর অনুষ্ঠান ‘কি পড়ি, কেন পড়ি, কোন পথে চলি’। প্রধান বক্তা ছিলেন শ্রী অরুনাভ দত্ত, এম্পলয়মেন্ট অফিসার, এম্পলয়মেন্ট হেডকোয়ার্টার্স, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও মগরাহাট ১ ব্লকের বিডিও শ্রী বিশ্বজিৎ মন্ডল। অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ ছিল প্রচুর। উদ্যোগীর একজন এডমিন ও শিক্ষক পল্লব সেনগুপ্তের কথায়, ‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম যে পঞ্চাশ জনের বেশী শ্রোতা পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে যখন আবহাওয়া যথেষ্ট খারাপ থাকার জন্য নেটওয়ার্ক এর সমস্যা ছিল। কিন্তু একশোজনেরও বেশী অংশগ্রহণ করায় আমরা সবাইকে জায়গা দিতে পারিনি। তাদের কথা দিয়েছি আমরা তাদের প্রোগ্রাম মডিউল শেয়ার করবো। পরবর্তীকালে আরোও বড় প্ল্যাটফর্মে আরোও বেশী ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌছনোর প্রয়াস থাকবে। এই প্রয়াসের সাফল্যই প্রমাণ করে আমরা ঠিক পথে চলছি’।
অনুষ্ঠানে ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মন্ডল মর্মস্পর্শী ভাষায় এই প্রয়াসের সাফল্য কামনা করেন ও সর্বদা পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এম্পলয়মেন্ট অফিসার অরুনাভ দত্তের প্রেজেন্টেশনের বিষয়ই ছিল রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলি, চাকরির সুযোগ ও কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি। পরিশেষে ছাত্রছাত্রীরা মন খুলে নিজেদের কথা বলে ও নানা প্রশ্নের মাধ্যমে দুই বক্তার কাছ থেকে উত্তর পেয়ে নিজেদের জীবনে চলার পথ সম্পর্কে ধারনা স্পষ্ট করে।
এই অস্থির পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের একটা জায়গায় এনে তাদের মানসিক, সামাজিক, বিষয়গত সমস্যাগুলির সমাধান করার ‘উদ্যোগী’ র এই প্রয়াস একটা নজির সৃষ্টি করলো।