মলয় দে, নদীয়া:- ২৬ বছর বয়সে নির্মল মন্ডল জোর পাননা একটি পায়ে, বছরখানেক আগে একবার রক্ত দিয়ে ছিলেন স্থানীয় প্রতিবন্ধী সংগঠনে। কিছুদিন আগে পূর্ণিমা মিলনীর রক্তদানের আহ্বানে সচেতনতা রেলিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারাও। তখনই স্থির করেছিলেন এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না, গতকাল সকালে নদীয়া জেলার শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনীর আয়োজনে রক্তদানে ট্রাইসাইকেল চালিয়ে দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রক্তদান করে আবারও সুস্থতার সাথে বাড়ি ফিরে গেলেন সমাজের সাধারণের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে। সেই অর্থে কোন আমন্ত্রণ না পেলেও ,শান্তিপুর শ্যামবাজার নিবাসী ৫৫ বছর বয়স্ক গৌড় চন্দ্র সাধুখাঁও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে রক্তদান করেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী বয়স ক্রমশ বাড়ছে, হয়তো বয়সের ভারে আগামীতে সম্ভব হবে না এই পূণ্যকাজ। শান্তিপুর ডাকঘরের বাসিন্দা পাপিয়া খাতুন ও মৌসুমী খাতুন দুই বান্ধবী পাশাপাশি শুয়ে রক্তদানের ইচ্ছা ছিলো বহুদিনের, মৌসুমির শারীরিক সমস্যার জন্য রক্ত নিতে ডাক্তারবাবুরা সমর্থন না হলেও পাপিয়ার মাথার পাশে একভাবে বসে ছিলেন তিনি।
শান্তিপুর জলেশ্বর তেলিপাড়ার দশম শ্রেণীর ছাত্র সূর্য মল্লিকের ১৫ বছর বয়স, মা বৈশাখী মল্লিককে আবদার করেছিলো তাদের সংগঠনে রক্ত দানের জন্য। ছেলের কথা রাখতে অতীতের সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা দূরে সরিয়ে আজ রক্ত দিলেন ছেলেকে মাথার পাশে বসিয়ে। তিনি জানান আগে কোনদিন দিইনি! তবে ছেলের মধ্যে আদর্শ তৈরি করতে নিজেকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন প্রথমেই।
এইরকমই নব প্রজন্মের বহু যুবক-যুবতীর অদম্য আগ্রহের নজির সৃষ্টি করেছিল শান্তিপুর পূর্ণমিলনী। কবি করুণানিধান স্ট্রিটে সম্পূর্ণ পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে এই মহৎ কর্মকাণ্ডে সাক্ষী হতে ছুটে এসেছিলেন রানাঘাট মহকুমা শাসক হরসিমরান সিং, বিডিও সুমন দেবনাথ, বিশিষ্ট ডাক্তার শিবাজী কর সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে রুপায়ন চৌধুরী জানান ৫০ জন রক্তদাতার আয়োজন থাকলেও , রক্তদাতাদের আগ্রহের নিরিখে ডাক্তার বাবুদের বিশেষ অনুরোধ করে আরো পাঁচজনের বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারলেও, বেশ কিছু নতুন রক্তদাতার ইচ্ছে পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। তবে উপস্থিত মহকুমা এবং ব্লক প্রশাসকের কাছে সংস্থার মাধ্যমে কোভিদ পরীক্ষার একটি আবেদন জানিয়েছি, তা মঞ্জুর হলে অতি শীঘ্রই আবারো আয়োজন করবো রক্তদানের।