রায়গঞ্জঃ
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের দুই পারের জওয়ানদের জোড়া যন্ত্রণায় রোজই ভোর হয় মহিষগাঁও সীমান্তের মানুষদের। কাটাতারের বেড়া ঘেঁষে ঘরগুলির সমস্যার কাহিনী রীতিমতো বেদনাদায়ক। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের চৌনগর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের মাকড়হাট সীমান্ত। হাত বাড়ালেই বাংলাদেশ। বছরের প্রতিটা দিন সেখানে ঘড়ির কাঁটা মেপে স্রেফ টিকে থাকার লড়াই করতে হয় প্রায় হাজার বারোশো মানুষকে। শুধু নভেম্বরে মিলন মেলা ছাড়া নতুন কোন আনন্দ পরিবারগুলির ভাগ্যে নেই। ভারতের সিম কার্ড এখানে কাজ করে না। হাসপাতাল পৌঁছনোর আগেই ভুটভুটিতেই নবজাতকের জন্ম হয়। ইঞ্জিনচালিত ভুটভুটি সীমান্ত বাসীদের জীবনরেখা। বাইরের দুনিয়ার যোগাযোগের একমাত্র বাহন। গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘ সন্ধ্যা সাতটার পর হাট করে বাড়ি ঢুকতে পারিনি অনেক দিন। বিএসএফ রাস্তায় আটকে রাতভর ক্যাম্পে বসিয়ে রেখে দেয় গ্রামের বাসিন্দাদের’। শুধু কি তাই সীমান্ত বাহিনীদের রাস্তা ধরে রোজ যাতায়াত করতে হয় তাদের। বিকল্প কোন রাস্তা আজও গড়ে ওঠেনি। ফলে একটু বেচাল হলেই হাজার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় সীমান্তবাহিনীদের। রোজ রোজ এই কষ্ট আর সহ্য করতে হয় তাঁদের। অন্যদিকে কাঁটাতারের ওপারে ভারত ভূখণ্ডই এপারের বাসিন্দাদের কয়েকশো আবাদি জমি রয়েছে অথচ সেখানে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদের (বিজিবি) রোষানলের মুখে প্রায়শই পড়তে হয় মহিষগাঁও, মাকড়হাট সীমান্ত বাসিন্দাদের। বছর দুয়েক আগে চাষ করতে গিয়ে বিজিবি’র গুলিতে প্রাণ হারান ভারতীয় কৃষক। শেষ সীমান্তবাসী হওয়ায় দুর্ভাগ্যের কাটা নিয়েই প্রতিদিন অসম লড়াই করতে করতে দিন রাত কাটাতে হয়। একটাই প্রাথমিক স্কুল রয়েছে গ্রামে। কিন্তু নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি দুপারের দুঃস্বপ্ন নিয়ে কাটাতে বাধ্য হন এই গ্রামের বাসিন্দারা।