সোশ্যাল বার্তা : কমিউনিটি কিচেন চলছে । তার মধ্যেই মোবাইলে ফোন ! “আপনার হোয়াটস অ্যাপে কিছু ডকুমেন্টস পাঠিয়েছি সময় হলে একটু দেখবেন “।
মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে জানা গেল মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগের বাসিন্দা শেফালী দত্ত ২০১৫ সালে ওভারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হন । একটা সময় কোলকাতার এক বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় । তার স্বামীর ছিল মুদি দোকান । চিকিৎসা করাতে করাতে এখন একদম নিঃস্ব । শেষ সম্বল মুদি দোকানও বর্তমানে আর নেই । বতর্মানে তার চিকিৎসা চলছে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ।
কিন্তু এই রোগের খরচ অনেক কিভাবে মিলবে সাহায্য ? তখনই মনের অগোচরেই ভেসে ওঠে, সেই মানুষটার মুখ মৃণাল সিনহা ওসি নওদা ।
পরোপকারী মৃনাল বাবুর বাড়ি নদীয়া জেলার বগুলা সংলগ্ন বহিরগাছি গ্রামে । এলাকার অধিকাংশই মানুষ “কালু” নামে তাকে চেনেন । লক ডাউনের মধ্যে দিন-রাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন । মুর্শিদাবাদ জেলার বাইরে নদীয়ার শান্তিপুরের নিষিদ্ধ পল্লীর জন্যও তিনি গাড়ি করে খাদ্য সামগ্রীও পাঠিয়েছেন ।
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ছেলে অর্ণব দত্ত জানান – মায়ের চিকিৎসার জন্য লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে গেছেন সাহায্যের জন্য কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি,খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এই মুহূর্তে ঔষধ ও রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে কিন্তু হাতে কোনো পয়সা নেই । কিছু খাবার পেলে ভালো হয় ।
সঙ্গে সঙ্গে ফোন যায় মৃনাল বাবুর কাছে । সব শোনেন ঠিকানা জানতে চান মুখে ছোট্ট উত্তর “দেখছি” ।
গতকাল সকাল বেলায় বাজার থেকে হরলিক্স, কাজু , কিসমিস , আম , খেজুর , ডিম সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী কেনেন নিজে হাতে । নওদা থেকে গতকাল লোক মারফত নিজের পরিবারের জন্য সঞ্চিত অর্থ থেকে জিনিসপত্রের সঙ্গে নগদ ১০০০০ (দশ হাজার টাকা ) রক্ত পরীক্ষা ও ওষুধ পত্রের জন্য পাঠান ।
সন্ধ্যেবেলা সব জিনিসপত্র পৌঁছে যায় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে । রাত ৮টার সময় টাকা পাওয়ার পরে ছেলে বেড়িয়ে পরে কোলকাতার উদ্দেশ্যে মায়ের জন্য কেমো জোগাড় করতে ।
রোগীর ছেলে জানান ” মৃনাল বাবুর অবদান জীবনেও ভুলতে পারবো না । পুলিশ সম্পর্কে আমার ধারণাই বদলে গেল । ওনার টাকা না পেলে আমি মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে যেতে পারতাম না । ”
এই প্রসঙ্গে নওদা থানার ওসি মৃণাল সিনহা বলেন ” এটি তেমন কিছু নয়, মানুষ মানুষের জন্য । সারাজীবন ধরে এভাবেই মানুষের সেবা করে যেতে চাই । ”
এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য তাঁর থানা এলাকায় কড়া নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকলেও মানবতার মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করে চলেছেন তিনি । কখনও নাবালিকার পড়াশোনার খরচ, অসুস্থ রোগীদের সাহায্য , আগুনে ঘর পুড়ে যাওয়ার জন্য নতুন ঘর , কখনও বা ঈদের পরব বা দুর্গা পূজার সময় নতুন পোশাক বিলির মাধ্যমে ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই পুলিশ আধিকারিক মৃনাল সিনহাকে নিউজ সোশ্যাল বার্তার পক্ষ থেকে হাজারো কুর্নিশ ।