প্রান্তিক মানুষের সেবায় কাজ করে চলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানব বন্ধন’

Social

সোশ্যাল বার্তা :  সারা বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশ তথা রাজ্যও এর ব্যতিক্রম নয়। ধীরে ধীরে করোনার থাবা গ্রাস করছে সমাজকে। মহামারী থেকে মানুষকে বাঁচাতে এল লকডাউন।  সংক্রমণের আশঙ্কা কমলেও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য একটা বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি হল। ‘দিন আনি দিন খাই’ শ্রেণীর মানুষরা হারাল কাজের সুযোগ। হঠাৎ করেই পেটে টান পড়ল সাধারণ মানুষের।

এমতাবস্থায় নদীয়া জেলার ধানতলা থানার অন্তর্গত দত্তপুলিয়া ও তার আশপাশের কয়েকজন উদ্যমী ছেলেদের নিয়ে তৈরী হল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানব বন্ধন’। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সমাজের প্রান্তিক তথা অসহায় শ্রেণীর পাশে দাঁড়াতে।  ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সুড়সুড়ির ছোঁয়া বাঁচিয়ে সংস্থাকে এগিয়ে চলল ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্যগুলির সম্পর্কে প্রচারের মাধ্যমে। বহূ মানুষ বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত। নগদ অর্থ থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী কিনে দিয়ে সাহায্য করলেন । অনুদানের নগদ অর্থ দিয়েও অনেক খাদ্যসামগ্রী কেনা হল এবং প্যাকেটবন্দী হল। মানব বন্ধনের কর্মীরা খোঁজখবর নিয়ে অসহায় মানুষের দরজায় পৌঁছে গেল। ধাপে ধাপে দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ও পার্শ্ববর্তী উত্তর ২৪ পরগণার সিন্দ্রাণী গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্থানে অসহায় বাসিন্দাদের কাছে সেগুলি একে একে পৌঁছে গেল। পাশাপাশি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসিমুখে সাধারণ মানুষের পরিষেবা প্রদানকারী এলাকার সিভিক ভলেণ্টিয়ার ভাইদের জন্যও মাস্ক, স্যানিটাইজার ইত্যাদি কিছু উপহারসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।

সরকারী রেশন ব্যবস্থার সুবাদে মানুষের খাবারের সমস্যা কিছুটা মিটল। কিন্তু যাদের রেশন কার্ড নেই ? পার্শ্ববর্তী শিলবেড়িয়া ইঁটভাটা এলাকায় আটকে পড়া প্রায় ৫০টি পরিবারের শ’দুয়েক পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের বাচ্চারা রেশনের সুবিধা পাচ্ছে না। খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মানব বন্ধন পৌঁছে গেল সেখানে তাদের কাছে , হাসি ফুটল নিরন্ন অসহায় মানুষের মুখে।

লকডাউন চলাকালীনই এল সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড়ো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘূর্ণিঝড় আমফান। রাজ্যের একটা বিরাট অংশ জুড়ে চলা আমফানের কারণে ঘরছাড়া হল মানুষ। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ থেকে আবার শুরু হল দৌড়। কয়েক হাজার নতুন ও পুরানো পরিষ্কার জামাকাপড় সংগৃহীত হল। সেগুলোকে বাছাই করে নদীয়ার আরো প্রায় ৪৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সংগৃহীত ত্রাণসামগ্রীর সাথে পাঠানো হল ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সুন্দরবনে। সঙ্গে পাঠানো হল কয়েক বস্তা বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাবারের প্যাকেট।

সংগঠনের একজন সদস্য জানান “কেউ চায় না বিপর্যয়, কেউ চায় না মহামারী। তবু সেগুলি আসে, তছনছ করে দেয় সবকিছু। প্রকৃতির খেয়ালের কাছে আমরা অসহায়। তা বলে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। কিছু করার তাগিদ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ‘মানব বন্ধন’-এর। আমরা দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি অসহায় মানুষের পাশে। আমরা চিরকাল থাকতেও চাই। সংস্থার সদস্যদের মাসিক অনুদান, যেকোন বিপর্যয়ে এককালীন অনুদান এবং পরিচিত মানুষদের আন্তরিক সহায়তা আমাদের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে আমরা আশাবাদী।  সকলের শুভেচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে রক্তদান, বনসৃজন ইত্যাদি সবরকমের সামাজিক কর্মকাণ্ডে আমরা যুক্ত হব। যত প্রতিকূলতাই সামনে আসুক না কেন, আমাদের পথ চলা থামবে না এই আশাই রাখছি।”

Leave a Reply