মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে বিদেশেও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মুখ উজ্বল করলেন ওসি নওদা

Social

নিউজ সোশ্যাল বার্তা: অসহায় বৃদ্ধাদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করছেন হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল পুলিশ অফিসারের । পুলিশ অফিসারের ফোনটা ধরলেন সঙ্গে থাকা এক সিভিক ভলেন্টিয়ার । ওপারের কথাগুলো শুনে সে কেমন যেন একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল । বললেন স্যার একটু ব্যস্ত আছেন একটু পরে আপনাকে ফোন করছেন । চোখ এড়ায়নি পুলিশ অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর মৃনাল সিনহার । জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার কে ফোন করেছে ? বলতেই সিভিক ভলেন্টিয়ারের উত্তর স্যার, বলছেন “আমাদের বাঁচান”।

সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন ওসি মৃনাল সিনহা মহাশয় । জানতে পারেন কিছু বাংলাদেশী মানুষ অসুস্থ থাকায় ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন ব্যাঙ্গালোরে । দেশ জুড়ে লক ডাউন থাকায় চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফিরতে পারেননি তারা অথচ কাছে নেই কোনো অর্থ । যা ছিল তার সর্বস্ব দিয়ে বিমানের টিকিট কেটেছিলেন কিন্তু তাও বন্ধ । এখন কী করবেন তারা দিশাহারা । বাংলাদেশী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল সেখানে মোট ৬ টি পরিবার রয়েছে । সঙ্গে খাবার যা কিছু ছিল সব শেষ।বাংলাদেশের রাজশাহীর একজন ভদ্রলোক কলেজের অধ্যাপক তাদের কাছে মৃনাল বাবুর ফোন নং দিয়েছেন বলেছেন ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করুন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করবেন সে তো বাংলার বাইরে? থেমে থাকার পাত্র নন মৃণাল বাবু । তার ছোট ভাই ভারতীয় রেলে  কর্মরত বর্তমানে রয়েছেন ব্যাঙ্গালুরুতে । সঙ্গে তাকে ফোন করেন এবং কোনো চিন্তাভাবনা না করে নিজের ভবিষ্যতের জন্য জমানো টাকা ৬টি পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দেন ভাই এর একাউন্টে । তার ভাই ১০ কিলোমিটার মোটর সাইকেল চালিয়ে ৬টি পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করে তাদের থাকা-খাওয়ার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করেন । যতদিন লকডাউন চলবে তাদের সমস্ত দায়িত্ব তুলে নেন মৃণাল বাবু নিজের কাঁধে  ।

শুধুমাত্র এইবার প্রথম নয় সর্বদাই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মুখ উজ্বল করেছেন এই পুলিশ অফিসার । কখনো দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের সারাজীবন পড়াশুনার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে, কখনো নাবালিকা মেয়ের বিয়ে আটকে পড়াশোনার দায়িত্ব, কখনো বা অসুস্থ রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে চলেছেন এই পুলিশ অফিসার। একদিকে যেমন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তিনি খুবই কঠোর অন্যদিকে মানবিকতার ক্ষেত্রেও বড় উদার তিনি ।

মানবিকতার এমন চূড়ান্ত উদাহরণ রাখলেন তিনি যা জেলা, রাজ্য এমনকি দেশের সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নজির সৃষ্টি করলো ।

প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখনও দেখা গেল একজন বৃদ্ধ এসে হাজির হয়েছেন তার প্রতিবন্ধীর ছেলে ইন্দোরে লক ডাউনে আটকে পড়েছে তাকে ফেরানোর জন্য । মৃনাল বাবুর হাসি মুখে উত্তর “বাবা এখন তো আনতে পারব না দেখছো তো দেশের অবস্থা সব বন্ধ । কোথায় আছে ঠিকানা দাও আমি দেখছি। সব মিটে যাক তোমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনবো, এই বাবাকে একটা ত্রাণের প্যাকেট আর গাড়ি করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আয়” ।

Leave a Reply