নিউজ সোশ্যাল বার্তা : বিজিটিএ বা বৃহত্তর গ্রাজুয়েট টিচার অ্যাসোসিয়েশন একটি অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠন। নদীয়া জেলা কমিটির আহবানে আজ নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে তাদের দাবি নিয়ে ডেপুটেশন দেয়।
গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরির শিক্ষকরা বিগত দুই দশক ধরে আর্থিক দিক থেকে চরমভাবে বঞ্চনার শিকার। NCTE-এর নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের বেতনের গ্রেড পে যেখানে ৪৬০০ টাকা, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের গ্রেড পে মাত্র ৪১০০ টাকা। বাম আমল থেকে সূচিত এই বেতন বঞ্চনা বর্তমান আমলে শুধু যে বহমান তাই নয়, ষষ্ঠ বেতন কমিশন প্রবর্তনের পর তা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। অন্যদিকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের গ্রেড পে সর্বভারতীয় স্তরের সঙ্গেই সমতা বজায় রেখে ৪৮০০ টাকা করা হয়েছিল।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনেকেই বলেন- “২০০৯ সালের প্রকাশিত রোপাতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের থেকে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের বেতনের পার্থক্য ছিল যেখানে ৩২১০ টাকা, সেখানে ২০১৯ এর রোপাতে সেই বেতন ব্যবধান বেড়ে হয়েছে ৯২০০ টাকা। এই বেতন বৈষম্য নিরসনে বৃহত্তর গ্রাজুয়েট টিচার্স এ্যাসোসিয়েসন দীর্ঘ দিন ধরে আইনি পথে এবং গণআন্দোলনের মাধ্যমে লড়াই করে যাচ্ছে।
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মাননীয় সৌরেন ভট্টাচার্য বলেন- “সরকার পোষিত বিদ্যালয়ের সমস্ত শ্রেণীর শিক্ষকদের সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় ক্যাশ ফেসিলিটি প্রদান এবং নর্মাল সেকশনে নিযুক্ত গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরির শিক্ষকদের অনৈতিক ভাবে আপার প্রাইমারি স্তরে দেখানোর বিরুদ্ধে বিজিটিএ আইনি পথে এবং আন্দোলনের রাস্তায় লড়াই করছে এবং করবে”।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে গত ২২জুলাই ২০১৯ মহামান্য হাই কোর্ট ‘রিট অফ ম্যান্ডামাস’ জারি করে পে কমিশনকে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করে সমতা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। কিন্তু তা কার্যকর করতে সরকার তথা পে কমিশন গড়িমশী করায় বিজিটিএ গত ৩০ আগস্ট প্রায় ২২ হাজার শিক্ষকের উপস্থিতিতে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে বিশাল মিছিল বের হয়ে রানি রাসমণি অ্যাভেনিউতে মান্যতা সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। এরপর ১৩ই নভেম্বর পে কমিশনের সুপারিশ পেশ করা হলেও বেতন বৈষম্যের অবসান কল্পে হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পে কমিশন কোন পদক্ষেপ না করার জন্য বিজিটিএ হাই কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করে। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের জন্য নতুন রোপা প্রকাশিত হয়, কিন্তু সেখানেও গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের পুরোনো গ্রেড পে ৪১০০ ধরেই হিসাব করে বেতন বাড়ানো হয়। গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের অধিকারের দাবিকে হাইকোর্টের রায় মান্যতা না দেওয়ার জন্য বিজিটিএ-র আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজ্যের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক টিজিটি স্কেলের দাবি না মেটায় নভেম্বর মাসে শহীদ মিনার ময়দানে বিজিটিএ ধর্ণা অবস্থানের আয়োজন করে পরবর্তীতে ১১ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিকাশ ভবনের সামনে ধর্ণা অবস্থানে সামিল হয় ।
রাজ্য সরকার সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্বে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেন। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ গত ১ মার্চ ২০২০ পে কমিশনকে ১৪দিনের সময়সীমা ধার্য্য করেন। এরমধ্যে বেতন বৈষম্যের অবসানে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেই রেকমেন্ডেশন আদালতের কাছে জমা করার নির্দেশ দেন।
বিজিটিএ নেতৃত্ব জানান পে কমিশন গ্রেড পে বৃদ্ধিসহ টিজিটি স্কেল প্রদানের বিষয়ে এরমধ্যে কোনো পদক্ষেপ না করলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা মিটে গেলে এপ্রিল মাসের শুরুতেই বিকাশ ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসবে। তারা জেলায় জেলায় ডিআইকে ডেপুটেশন কর্মসূচি নিয়েছে। সেই কর্মসূচিরই অঙ্গ হিসেবে নদীয়া ডিআই অফিসে জেলার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকরা দুপুর ১টায় জমায়েত শুরু করে, চলে স্লোগান, বক্তৃতা।
ডেপুটেশনে উপস্থিত ছিলেন বিজিটিএ- রাজ্য সম্পাদক শ্রী সৌরেন ভট্টাচার্য। জেলা সম্পাদক অমিত চ্যাটার্জী বলেন “যে সমস্ত গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক ২০১৬ সালের আগে নিযুক্ত হয়েছেন তাদেরকে কোনো ভাবেই আপার প্রাইমারি স্তরে অবনমন মানা হবে না”।
সংগঠনের জেলা সভাপতি কার্তিক পোদ্দার মহাশয় বলেন “প্রয়োজনে যে সমস্ত প্রধান শিক্ষক এই বেআইনি ভাবে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের আপার প্রাইমারি স্তরে দেখাচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ভাবে মামলা দায়ের করা হবে। এই মুহূর্তে পশ্চিম বঙ্গের একলক্ষ কুড়ি হাজার গ্রাজুয়েট শিক্ষক/ শিক্ষিকা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন কবে রাজ্য সরকার হাইকোর্টের রায়কে শিরোধার্য করে বিজিটিএ-র দাবি বা অধিকারকে সম্মান জানিয়ে টিজিটি স্কেল প্রদানের বাস্তবায়ন করবে। একাধিক বার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দাবিদাওয়া সম্পর্কে অবগত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও দরবার করা হয়। কিন্তু এখন অব্দি কোন সদুত্তর আমরা পাইনি” ।