শুরু হলো নদীয়ার বহু প্রাচীন এবং ঐতিহ্যপূর্ণ কৃষ্ণনগরে বারো দোলের মেলা

Social

মলয় দে নদীয়া :-শুরু হল কৃষ্ণনগরের বহু প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী বারোদোলের মেলা। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমার পর একাদশী তিথিতে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে এই মেলা বসে।

অনুমান করা হয়, ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এই মেলার প্রবর্তন করেন। তবে এই মেলার প্রবর্তন সময় সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য পাওয়া আজও যায় নি।

কারও কারোর মতে, দোলের ১২ দিন পরে এই মেলা বসে । আবার অন্য মত অনুযায়ী একসময়ে নদিয়ার মহারাজ বিভিন্ন স্থানে মোট ১২টি কৃষ্ণমুর্তি স্থাপন করেছিলেন। সেই সমস্ত বিগ্রহই একসঙ্গে এনে রাজবাড়িতে মণ্ডপ করে কাঠের সিংহাসনে সাজিয়ে রাখা হয়। সাধারন মানুষও এই সময় এই বিগ্রহ দর্শন করতে পারেন। তবে বারোদোলের মেলায় শুধু এই ১২টি বিগ্রহই থাকে না। থাকে রাজবাড়ির বড় নারায়ণ বিগ্রহ। এছাড়াও, নদিয়ারাজ কর্তৃক নদিয়া এবং আশপাশের জেলায় যে ১২টি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেগুলিও রাখা হয় ।
এই বিগ্রহগুলি নদিয়া ছাড়াও বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। তবে এখন আর সব বিগ্রহ রাজবাড়িতে আসে না । বারোদোলে এই সমস্ত বিগ্রহকে পুজো করা হয় । একমাস পরে বিগ্রহগুলি ফের তাদের আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় । এই তিন দিন বিগ্রহগুলিকে তিন রকম পোশাক পরানো হয় । প্রথম দিন পরানো হয় রাজবেশ, দ্বিতীয় দিন ফুলবেশ এবং তৃতীয় তথা শেষ দিন পড়ানো হয় রাখালবেশ । কথিত আছে, সেই সময়ে রাজপরিবারের মহিলাদের পক্ষে কোনও মেলা দেখা সম্ভব ছিল না । তাদের সেই সুযোগ করে দিতেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে এই মেলার প্রবর্তন করেন । অন্যমতে, নদিয়ারাজ গিরীশচন্দ্র রাজমহিষীর অনুরোধে এই মেলার প্রবর্তন করেন । এই মেলাকে ঘিরে আজও মানুষের উৎসাহের অন্ত নেই। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন এই মেলায়। নানা মনোহারি দোকান থেকে শুরু করে খাবারের দোকান এবং নানা মনোরঞ্জনের দোকানীরাও এই মেলায় হাজির হন তাদের পসরা সাজিয়ে।

রাজবাড়ির একটা অংশ এই সময় খুলে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। দোল উৎসব পার হয়ে যাওয়ার পরেও ফের এই বারোদোলকে ঘিরে উৎসবে মাতেন মানুষ। আর সেই উৎসবে শুধু কৃষ্ণনগর নয় আশপাশের এলাকার মানুষও যোগ দেন। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই মেলার সঙ্গে যে শুধু মানুষের মনোরঞ্জন আর উৎসবের আনন্দ জড়িয়ে আছে তাই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে নদিয়ার রাজপরিবারের ঐতিহ্যও। প্রায় একমাস ধরে চলে এই মেলা।

Leave a Reply