মলয় দে, নদীয়া:- লোককাহিনী অনুযায়ী , শিব যোগীরাজ হলেও মূলত ভিক্ষুক! রোজগারে অমনোযোগী, এ নিয়ে রাজার দুলালী গৌরির সাথে কলহ লেগেই থাকত। ক্ষোভে দুঃখে অভিমানী কাশির ঘরের মেয়ে অন্নপূর্ণা বাপের বাড়ি চলে আসে। জয়া বিজয়ার পরামর্শে জগতের সকল অন্য হরণ করে। শিব হা- অন্য, হা -অন্য করতে থাকে শেষে লক্ষ্মীর পরামর্শে, কাশিতে এসে অন্নপূর্ণার হাত থেকে অন্ন খেয়ে পরিতৃপ্ত হন। কদর করতে শেখেন অন্নের, এবং অন্নপূর্ণার। সেই থেকে চৈত্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে পূজা হয়ে থাকে অন্নপূর্ণার। দ্বিভূজা দেবীর বাম হস্তে সোনার অন্নপাত্র এবং ডান হস্তে, দর্বী অর্থাৎ চামচ বা হাতা। মাথায় বিরাজিত অর্ধচন্দ্র। আগম্বাগিশ তন্ত্রসার গ্রন্থ অনুসারে অন্নদাতা মহাত্মগাথা নিয়ে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় রচনা করেন অন্নদামঙ্গল কাব্য।
জনশ্রুতি অনুযায়ী অন্নপূর্ণা দেবী কে বঙ্গদেশে প্রচলন করেছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পূর্বসূরি ভবানন্দ মজুমদার। দেবী অন্নদার কৃপা প্রাপ্ত হয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন। কিন্তু অন্নদামঙ্গল অনুযায়ী, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এর কাছে নির্ধারিত দিনে করবা রাজস্ব মেটাতে না পারার কারণে দূর্গা পূজা চলাকালীন মুর্শিদাবাদে কারারুদ্ধ হন। নদিয়াধিপতির দুর্গা দর্শন না হওয়ার কারণে, অন্নপূর্ণা সাক্ষাৎ দর্শন দিয়েছিলেন তাঁকে, সেই থেকে বঙ্গদেশে অন্নপূর্ণা বা অন্নদা পূজার সূত্রপাত বলেই মনে করেন পূজারীরা।
বারোশো ষাট সালের মাঘী পূর্ণিমায় শান্তিপুরের সুসন্তান হীরালাল সাহা বড়বাজারে তৎকালীন সুতাপট্টি অঞ্চলে এই পূজার প্রবর্তন করেন। যাত্রাগান, মহোৎসব (অন্নক্ষেত্র) ইত্যাদি এই পূজার অঙ্গ। শান্তিপুরের আমড়াতলায় অপর আরেকটি পুজো দেখতে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে বড়বাজারে পূজিত অন্নপূর্ণা মায়ের যাবতীয় দায়দায়িত্ব বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতি শান্তিপুর শাখার। এ বছর পূজো ১৭০ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে আজ সূচনা ।সেই আমল থেকে শান্তিপুর মালোপাড়ায় একখানি পুকুরের উপার্জিত অর্থ আজও মায়ের, পুজোর খরচ কিছুটা হলেও ব্যয় ভার বহন করে। তবে তার নিজের পুকুরের মাছ ভোগ হিসেবে খেয়ে থাকেন পঞ্চমীতে। তবে ষষ্ঠী অর্থাৎ বিসর্জনের শেষ দিন চড়ূ খেয়ে রওনা দেন তিনি। বহু প্রাচীনকালে এরকমই এক বিসর্জনের দিনে পুজো উদ্যোক্তা গোপালপুরের সাহাবাড়ির কোন এক সদস্য প্রয়াত হন, সেই থেকেই এই রীতি প্রবাহমান।