মলয় দে নদীয়া:- শান্তিপুরি শাড়ির পর এবার জিআই ট্যাগ পেতে চলেছে বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি।শংসাপত্র পাওয়া শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা। গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর করা একটি টুইট অনুযায়ী এমনই জানা গেছে।
বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি ছাড়াও কালুনুনিয়া চাল, করিয়াল শাড়ি, মধু এবং গরদের শাড়িকেও জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিটি দেওয়া হয়েছে। তারও আগে শান্তিপুরি শাড়ি কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন হিসাবে সরপুরিয়া, সম্প্রতি বারুইপুরের পেয়ারা এ ধরনের নানা বিষয় জি আই ট্যাগ পেলেও আদৌ উৎপাদনকারীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
এতে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের আরো উৎসাহ পারবে বলেই মত শিল্প মহলে। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ বীরভূম বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন শাড়ির পাশাপাশি হাতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ির প্রচলন রয়েছে। এক সময় বাংলার লক্ষ লক্ষ তাঁত শিল্পী এই টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গে যুক্ত ছিল তবে তাঁতিদের দাবি অনুযায়ী সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের সিন্থেটিক সুতো এবং উন্নত রেপেয়ার মেশিন আসার পর থেকেই এই শিল্প ধ্বংসের মুখে।
তবে জিআই ট্যাগিং নিয়ে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যবসায়িক এবং তাঁতি মহলে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজনকে ট্যাগিং হওয়া স্থানেই আসতে হবে ফলে পর্যটন সহ ব্যবসা বাড়বে উৎপাদনকারীদের উপার্জন বাড়বে। অন্যদিকে তাঁতিদের দাবি এর আগেও শান্তিপুরি শাড়িতে জিও ট্যাগিং লেগেছে প্রায় দু বছর আগে কিন্তু সুফল এখনো তারা পাননি, এমনকি কয়েকজন মাত্র রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছেন, বাকিদের কাছে সরকারি মহলের এই তথ্য পৌঁছানো কিংবা নিয়ম কানুন সরলিকরণ না করাই হোক কিংবা তাঁতিদের অজ্ঞতা থেকেই হোক এ বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন না কেউই । বরং তাদের দুশ্চিন্তা আগামীতে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হস্তচালিত ১০০ শতাংশ সুতির সুতো ব্যবহার করে তাঁত শাড়ি উৎপাদন না করে অসাধু উপায়ে শুভ উদ্যোগের অপপ্রয়োগ করা হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন অনেক তাঁতি।
জিআই স্বীকৃতি পাওয়াতে যথেষ্টই খুশি পদ্মশ্রী প্রাপ্ত তাঁত শিল্পী বীরেন বসাক। তিনি বলেন এটি আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াই ছিল। আমরা বিভিন্ন সরকারি দফতরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে টাঙ্গাইল শাড়ির স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।
অন্যদিকে কিছু সমস্যার কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, প্রথম উৎপাদন কেন্দ্র বাংলাদেশ হলেও আমরা বাংলায় যে সমস্ত টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করি সেই শাড়ি মূলত সম্পূর্ণ সুতি দিয়েই তৈরি হয়। যার কারণে শাড়ি তৈরিতে যে খরচ সেই খরচটা অনেকটাই বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন রাজ্য থেকে মেশিনে তৈরি যে সমস্ত শাড়ি বাংলায় আসছে তার গুণগত মান যেমন কম তেমনি মূল্য অনেকটাই কম। সেই কারণে বাংলার তৈরি টাঙ্গাইল শাড়ি চাহিদা অনেকটাই কমেছে বাজারে। এই বিষয়টা সরকারকে নজর রাখতে হবে এবং যাতে বাইরের যে সমস্ত শাড়ি এ রাজ্যে প্রবেশ করছে সেটা আটকানো যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন দিনদিন যদি অরিজিনাল টাংগাইল শাড়ির কোন ডুবলিকেট মার্কেটে আসে এবং সেটা বিনা বাধায় আমদানি হয় তাহলে দিন দিন হারিয়ে যাবে বাংলার টাঙ্গাইল তাঁত শিল্প।
তবে হস্তচালিত তাঁতিদের গড়ে তোলা সিপকোর ডাইরেক্টর সুমন শী বলেন, দু’বছর আগে শান্তিপুরি শাড়ি জিওগ্রাফিকাল ইন্ডাকেশন হলেও তারা সংগঠনগতভাবে এখনো আবেদন জানাননি, সম্পূর্ণভাবে এখনো পর্যন্ত সুতি সুতোতে হস্তচালিত তাতে কোয়ালিটি মেইন্টেন করে শাড়ি বুনন হলেও বেশ কিছু বিষয় এখনো পর্যন্ত মেনে চলার উপযোগী হয়ে ওঠেননি। সেই কারণেই প্রতীক্ষায় রয়েছেন আগামীর। তবে অপব্যবহার কখনোই নয়। তবে এর ফলে একটা সুবিধা হয়েছে দেশের বহিরাগত ক্রেতাদের একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানেই আসতে হচ্ছে, তবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক উৎপাদিত পণ্য হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারেও সরকারি তত্ত্বাবধান থাকুক।
কুলিয়ার দীর্ঘদিনের সমবায় আন্দোলনের সাথে যুক্ত টাঙ্গাইল সহ বিভিন্ন ধরনের তাঁত শাড়ি উৎপাদনশিল্পী হরিপদ বসাক অবশ্য এর পেছনে আবেগ দেখতে পেলেও তাঁতিদের পেটের ভাত জুটবে না বলেই মনে করেন। আদতে কাকের বাসায় ডিম ফুটিয়ে নেবে কোকিল। কারণ এ ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে অনেকেই হস্তশিল্পের কথা বলে থাকেন তবে মুনাফার জন্য পাওয়ারলুম এবং সুতি নয় এমন ধরনের সুতো ব্যবহার করেন আখেরে তাদেরই লাভ না হয় এমনই আশঙ্কা করেছেন তিনি।
তবে বহু বিশিষ্টজন এমনকি শান্তিপুরের বিধায়কিশোর গোস্বামী পর্যন্ত জি আই প্রাপ্তির পরে শান্তিপুর এবং ফুলিয়ার তাঁত শিল্পীসহ উৎপাদনের কাজে সংশ্লিষ্ট সমস্ত মানুষজন উপকৃত হবেন বলেই জানিয়েছেন।
তবে শান্তিপুর এবং ফুলিয়া পাশাপাশি এই দুই এলাকায় সাধারণ মানুষ এখন তাকিয়ে সুফল মেলার প্রতীক্ষায়। তবে রসগোল্লার প্রথম উৎপাদন ফুলিয়ায় হলেও শেষে গিয়ে বিহারের তকমা পাওয়ার দুঃখ কিছুটা হলেও পূরণ হলো বলে মনে করছেন অনেকে।