বিপ্লবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রাসের ভাবনায়  আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ব্রিটিশ আমলের সেলুলার জেল

Social

মলয় দে নদীয়া :-৭৫ বছরে পদার্পণ নদীয়ার শান্তিপুরের ঠাকুর পাড়া যুবকবৃন্দের রাস কালী পুজো। স্বাধীনতার ৭৬ বছর পদার্পণের উপলক্ষে এ বছর তাদের মন্ডপ পরিকল্পনায় রয়েছে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ব্রিটিশ আমলের সেলুলার জেল। জেলের কক্ষ গুলিতে থাকবে জীবন্ত মডেল কয়েদিদের অনুকরণে কলাকুশলী। কিভাবে অত্যাচার করা হতো বন্দিদের কিভাবে তারা থাকতেন সমস্ত কিছুই ফুটিয়ে তুলবেন তারা। থাকবে বেশ কিছু পুতুল মডেলও। সেলুলার জেলে ঐতিহাসিক কাহিনী মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের বোঝানোর জন্য থাকবে বিশেষ এক সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা। কোন নির্দিষ্ট টাইম নয় সম্পূর্ণ রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে সারা দিনরাত ব্যাপী চলবে এই কলা কুশল। অবিকল আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সেলুলার জেলের মতোই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নদীয়ার শান্তিপুরের এই মন্ডপ। মন্ডপের কাজ প্রায় শেষের পথে, কিছু কারুকার্য রয়েছে এখনো বাকি, পুজো কর্মকর্তারা মনে করছেন শীঘ্রই তাদের কাজ সম্পন্ন করে আগত দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দিতে পারবেন তারা এই মন্ডপ।

স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি বিশেষ অংশ হয়ে উঠেছিল এই সেলুলার জেল। ১৮৯৩ সালে শুরু হয়েছিল এই জেল তৈরির কাজ তা শেষ হয়েছিল ১৯০৬ সালে । স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ এবং সিপাহী বিদ্রোহের পর প্রায় ২০০ জন বিদ্রোহীকে আন্দামান দ্বীপান্তরে পাঠিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশরা। বলা হয় ১৮৫৭ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বীপগুলিকে পরিদর্শন করেছিলেন তারা। ১৮৫৮ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকার একটি প্রতিবেদনও জমা দেন। সে সময় সরকার আন্দামান দ্বীপকে কারাগার বা জেল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ১০ মার্চ ২০০ জন বিদ্রোহীকে এখানে আনা হয়েছিল

সেলুলার জেলের প্রতিটি কক্ষই ১৪.৯ ফুট x ৮.৯ ফুট উচ্চতার ছিল। মানে ৩ মিটার উচ্চতা বলা চলে। প্রত্যক থাকত মাত্র একটি করে ঘুলঘুলি। যেটা মেঝে থেকে ৯.৮ ফিট উচুতে অবস্থিত। একটি বিশেষ ডিজাইন করা লোহার গিল করা দরজা থাকত। এই ছোট ঘরে কয়েদিদের বন্দি থাকার কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছিল সেলুলার জেল। কক্ষগুলি এমন ভাবে বানানো হতো যাতে কোন বন্দি কারোর মুখ পর্যন্ত দেখতে না পান। তাঁদের যোগাযোগের উপায় পর্যন্ত ছিল। বন্দিদের বন্দি অবস্থায় প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বিভীষিকাময়।

জেলের তৎকালীন বাসিন্দাদের মধ্যে কয়েকজন পরিচিত রাজনৈতিক বন্দি হলেন- বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্র দাস কানুনগো, উল্লাসকর দত্ত, ইন্দুভূষণ রায়, বিভূতিভূষণ সরকার, হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল, সুধীনকুমার সরকার, অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য এবং বীরেন্দ্রচন্দ্র সেন। ৫৮৫ জনের মধ্যে ৩৯৮ জন বন্দি ছিলেন এ বাংলার।

তবে বর্তমানে সেলুলার জেল টুরিস্টদের জন্য এক অন্যতম আকর্ষণ রয়েছে। বহু বছর আগেই সেলুলার জেলের কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয় এরপর সেটিকে রূপান্তর করা হয় মিউজিয়ামে। সেলুলার জেলের প্রাঙ্গণে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা এবং সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে সাউন্ড-এন্ড-লাইট-শোতে বন্দিদের নির্যাতনের কাহিনী দেখানো হয়। এছাড়াও এখানে একটি জাদুঘর, একটি আর্ট গ্যালারি এবং একটি ফটো গ্যালারি রয়েছে। সোমবার ছাড়া সপ্তাহের সবদিন সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং দুপুর ২ টো থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

পুজো কর্মকর্তারা মনে করছেন আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে সেলুলার জেল যারা দেখতে যেতে পারেন না তারা জন্য শান্তিপুরে এসে এই মন্ডপ পরিদর্শন করলে কিছুটা হলেও তারা সেই আশ্বাদন নিতে পারবেন

প্রসঙ্গত এই ঠাকুরপাড়ার অত্যন্ত সু পরিচিত ক্লাব অ্যামেচার।
শোনা যায় অতীতে, পরপর এক যুগেরও বেশি সময়কাল ধরে তারাই প্রথম পুরস্কার পেতেন রাস উপলক্ষে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া শংসাপত্র অনুযায়ী।
কিন্তু তার পরবর্তী প্রায় আরো এক যুগ ধরে পুরস্কার গ্রহণ থেকে তারা বিরত থাকেন।
এর পেছনে শান্তিপুর বাসীদের জল্পনা ছিলো কোন এক বছরে তাদেরকে ঠিকমত মূল্যায়ন না করেই তাদেরকে ব্রাত্য রাখা হয়, তাই অভিমান করে পুরস্কার গ্রহন থেকে নিজেদের বিরত রাখা।
যদিও এই প্রশ্নের উত্তরে কর্তৃপক্ষ জানান, একভাবে পুরস্কার গ্রহণ অন্যদের অনুপ্রেরণা হারাচ্ছিলো তাই মানুষের বিচারের শ্রেষ্ঠ হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে পুরস্কার গ্রহণ থেকে বেরিয়ে আসা।

Leave a Reply