মলয় দে নদীয়া:- লন্ডনের বাসিন্দা এরিন ,জেনি ,সাশা এরা কেউই জন্মসূত্রে ভারতীয় নয়, এমনকি তার মা দেবী পাল ও নয়, তবে দাদু উৎপলেন্দু পাল নদীয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা ছিলেন। আর সেই সূত্রেই হয়তো তাদের রক্তে বইছে বাঙালিয়ানা। তাইতো সুদূর লন্ডন থেকে দাদুর সাথে বাবা লরেন্স মা দেবী পাল এর সাথে শান্তিপুরের তিলিপাড়ায় শতবর্ষ প্রাচীন দুর্গাপূজা দেখতে এসেছে। তাদের জীবনে এই প্রথম ভারতে আসা এবং দুর্গাপূজা দেখাও। তবে মা দেবী পাল ছোটবেলায় একবারই এসেছিলেন।
তিলিপাড়ার এই বাড়ি স্থানীয় আগা বাড়ি নামেই পরিচিত। শোনা যায় উৎপলেন্দু বাবুর দাদু নগেন্দ্র পাল একসময় বাংলাদেশের বাসিন্দা ছিলেন সেখানেই জমিদারদের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের তত্ত্বাবধান করতেন পালকির আগে আগে চলতেন বলেই জমিদারদের দেওয়া উপাধি “আগা”।
তবে উৎপলেন্দু বাবু ছোট থাকাকালীন তার বাবা প্রবোধ রঞ্জন পালের হাত ধরে শান্তিপুরে আসা। বাবার সাথে ইংরেজদের সুসম্পর্কের কারণে তিনি আসামসহ দেশের বাইরে ইমারতী ব্যবসায়ী হিসাবে সুপ্রসিদ্ধ হয়ে ওঠেন অল্পদিনের মধ্যেই। ছেলে উৎপলেন্দু কে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠান ইউনাইটেড কিংডমে। যদিও সেখানেই সু প্রতিষ্ঠিত হয়ে তিনি বিবাহ করেন সে দেশের মেম। চাকুরিরত সময়কালের মধ্যে কয়েক বছর বাদে বাদে কলকাতায় বাগবাজারের বাড়ি চট্টগ্রামের জমি জমা সম্পত্তি এবং শান্তিপুরের এই বাড়িসহ নতুনহাট ডাকঘর এলাকায় তাদের বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করা এবং সেই সাথে এই দুর্গা পুজোর আয়োজন করতেন মাঝে মাঝে। তবে অবসর গ্রহণের পর প্রায় প্রত্যেক বছরই তিনি এই দুর্গা পুজোতে আসেন। কাটিয়ে যান দীর্ঘ সময়, থাকেন দূর্গা পূজার লক্ষ্মীপূজো কালীপুজো পর্যন্ত।
মেয়ে জামাই দু নাতনি নিয়ে আসা 89 বছর বয়সী মনের দিক থেকে তরতাজা এই যুবক উৎপলেন্দু পাল জানান,
তার ঠাকুর দাদা নগেন্দ্র পাল এই বাড়িতে দুর্গা পুজোর সূচনা করেন ছোটবেলায় এই বাড়িতে পুজোর কটা দিন এক দেড়শ পরিবার সদস্যদের ভিড় থাকতো সবসময়। বর্তমানে পেশার কাজে বাইরে থাকার সুবাদে কিংবা এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আবেগ কমে যাওয়ার কারণে এখন শান্তিপুরে থাকা দুটি পরিবার কলকাতার এক পরিবার এবং লন্ডনে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যরা এ কটা দিন একসঙ্গে মজা করেন।যদিও দুর্গাপুজোর আগে কালী পূজার সূচনা হয়, বাড়ির এই ঠাকুরদালান স্থাপিত হয়েছে ১৩৪৮ সালে অর্থাৎ ঠাকুরদালানের বয়স ৮২ বছর। কিন্তু দুর্গা বা কালি দুই পুজোই শতাব্দী প্রাচীন। তবে বাবার হাতে কার্তিক পূজার সূচনা। বাংলাদেশ থেকে এ দেশে বর্তমান এই বাড়িতে শুধুমাত্র একটি মাটির ঘর ছিলো ।
সেই সময় থেকে বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের নিমাই দাস জানান। যেহেতু শূদ্রের ঘরে দুর্গাপুজো তাই আজও তিলি পাড়ার বারোয়ারির তত্ত্বাবধানে ব্রাহ্মণ দিয়ে ভোগ রান্না করিয়ে মাকে দেওয়া হয়।
উৎপলেন্দু বাবুর ভাই স্বরাজ পালের পুত্র সৌমক এ প্রজন্মের ছেলে, তার স্ত্রী গৌরবীকে সাথে নিয়ে এ পুজোর ধারাবাহিকতা রেখে চলেছে ছোটবেলা থেকে। মফস্বলের সকলে ঠাকুর দেখতে কলকাতা মুখি হলেও স্ত্রী পুত্রসহ পূজোর কটা দিন শান্তিপুরের বাড়ির পুজোর দিকে থাকে মন। সৌমক বলে মায়ের কাছে প্রতিবারই তিনি প্রার্থনা করেন সন্তান যেন এই পুজোর ধারাবাহিকতা আগামীতে বজায় রাখতে পারেন।
অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ননদ নন্দাই এবং তাদের মেয়েদের প্রসঙ্গে বাড়ির বউ গৌরবী বলেন, ঢাক কাঁসর উলু শঙ্খ ধ্বনি দেওয়া পুজোর যাবতীয় জোগাড় করা পর্যন্ত তারা নিজেদের আগ্রহে শিখে নিয়েছে এই দুদিনেই। বাঙালি খাদ্য খাবার থেকে শুরু করে কিছুটা ইংরেজি মেশানো কথাবার্তা এবং আকার ইঙ্গিততে ওরা আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। তবে এবার পুজোর বাড়তি পাওনা সকলকে একসাথে পাওয়ার খুশি। তবে কলকাতায় মেয়ে এবং শ্বশুর বাড়ি হয়েও আদি শশুর বাড়ি শান্তিপুরেই পূজোর সেরা আনন্দ পাওয়া যায় ।