সাতাত্তরেও মাটির প্রতিমা অপরুপা
প্রীতম ভট্টাচার্য: গায়ের রঙ ফর্সা ছিলো বলে মা নাম রেখেছিলো সাহেব।পাড়ার সবাই চেনে সাহেব পাল বা সাহেবদা নামে। নদীর মাটি দিয়ে চলতো মূর্তি তৈরী। বাবার কাছে মূর্তি তৈরীর হাতেখড়ি। বাবার সাথে ছোট থেকেই কুমোরটুলিতে যেতেন ঠাকুরের কাজ করতে। অভাবের সংসারে কোনোদিন ফিরে যাননি অন্য পেশায়, আঁকড়ে ধরে রেখেছেন মাটিকে। একসময় গুজরাট,বোম্বে, কলকাতা,আসাম,ত্রিপুরার ঠাকুর করতেন। করিমপুর রোডের ধারে ঘূর্ণী যেতে রাস্তার পাশে একচিলতে কারখানা মৃৎশিল্পী স্বপন পালের।
কৃষ্ণনগর ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা। দুই ছেলে নাতি, নাতনি নিয়ে একচিলতে টিনের ঘরে বাস।দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী গত হয়েছেন বেশ কয়েকবছর হলো।পেটের খিদেও হার মানে এই সাতাত্তর বছর বয়সী শিল্পীর সৃষ্টির কাছে। এখনো নিপুন দক্ষতায় কাঠামো থেকে প্রতিমা গড়েন নিজে হাতে।একসময় জগদ্ধাত্রীর বাঘ সিংহ তার হাতের জাদুতে জ্যান্ত হয়ে উঠতো।
এবছর চারটে প্রতিমা নিজে হাতে গড়েছেন। তাঁর কথায় জায়গাছোটো, লেবার ঠিকমতো পাওয়া যায় না, জিনিস পত্রের প্রচন্ড দাম, সেজন্য প্রতিমা গড়ি নিজে যেটুকু পারি।বয়সের ভারে অনেক পুজোর প্রতিমার অর্ডার ফেরৎ দিতে হয়।চাহিদা থাকলেও ঠিকমতো যোগান দিতে পারি না।এই বয়সেও শিল্পীর জেদের কাছে সৃষ্টির আনন্দ আরও অনেকদূর ছড়িয়ে পড়ুক। বার্ধক্যের কাছে নতজানু থাক যৌবন, অপরুপা হোক প্রতিমা, শিল্পীর ক্ষিদে হারমানুক সৃষ্টির নান্দনিকতায়।