মলয় দে নদীয়া :-গতকাল ছিল ২৭ অগাস্ট ২০২৩ রবিবার শ্রাবণ মাসের একাদশী। এদিন থেকে শ্রাবণী পূর্ণিমা অর্থাত্ রাখি পূর্ণিমা পর্যন্ত এই পাঁচদিন ধরে পালিত হবে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ঝুলন উত্সব। দোলযাত্রার পর এই ঝুলনই হল বৈষ্ণবদের কাছে অন্যতম উত্সব
মথুরা-বৃন্দাবনের মতোই বাংলার ঝুলন উৎসবের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। শাস্ত্রমতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্ত অভক্ত নির্বিশেষে সকলকে অনুগ্রহ করবার জন্য গোলকধাম থেকে ভূলোকে এসে লীলা করেন। ঝুলন শব্দের অর্থ দোলনা। এই সময় ভক্তরা রাধাকৃষ্ণকে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো দোলনায় বসিয়ে পুজো করেন।
শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের মোট বারোটি যাত্রার কথা উল্লেখ আছে। এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হল – রথযাত্রা, রাসযাত্রা, দোলযাত্রা, স্নানযাত্রা ও ঝুলনযাত্রা। মনে করা হয় যে বৃন্দাবনে রাধা-কৃষ্ণর প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে দ্বাপরযুগে এই ঝুলন উৎসবের সূচনা হয়েছিল। এক এক অঞ্চলে দোল বা দুর্গোৎসবের মতো ঝুলনের আকর্ষণ কিছু কম নয়। ঝুলনেও দেখা যায় নানা আচার অনুষ্ঠান ও সাবেক প্রথা। এই উৎসব হয় মূলত বনেদিবাড়ি এবং মঠ-মন্দিরে। রাধাকৃষ্ণের যুগল বিগ্রহ দোলনায় বসিয়ে হরেক আচার অনুষ্ঠান পালিত হয় এই সময়।
এর পাশাপাশি এই উত্সবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ঐহিত্য। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গেই ছোটদের ঝুলন সাজানোর আকর্ষণও কিছু কম নয়। নানা ধরনের মাটির পুতুল, কাঠের দোলনা আর গাছপালা দিয়ে ঝুলন সাজানো হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও ঝুলন উপলক্ষে চলে নামসংকীর্তন। এই সময় প্রতি দিন ২৫-৩০ রকমের ফলের নৈবেদ্য, লুচি, সুজি নিবেদন করা হয় রাধা-কৃষ্ণকে।
শান্তিপুর বাইগাছি মদন গোপাল মন্দিরে প্রতিবার মহাসমরে পালিত হয় এই ঝুলন যাত্রা যা দেখতে উপস্থিত হন শান্তিপুর এবং বহিরাগত দর্শনার্থী। এখানের বিশেষত্ব প্রথম দিন অর্থাৎ গতকাল যেমন পুষ্পের সিংহাসন সহ সমগ্র বিষয় সুসজ্জিত হয়েছে তেমনি কোনদিন ফল কোনদিন আনাজ কোনদিন মিষ্টান্ন এভাবেই প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হয় শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা। এই উপলক্ষে কীর্তন ধর্মীয় কথা আলোচিত হয় ভক্ত মাঝে।
অন্যদিকে প্রামানিক বাড়ির বিগ্রহ সহ বিভিন্ন গোস্বামী বাড়ির ঝুলন যাত্রা শুরু হয়েছে ।