মলয় দে,নদীয়া: সামনেই ১৫ ই আগস্ট ! বৃত্তিমূলক সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জাতীয় পতাকা তৈরি করে বাজার ধরতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা
সামনেই স্বাধীনতা দিবস, আর সেই কারণেই সরকারি বিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে জেলা ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের স্বীকৃতিতে গড়ে ওঠা বৃত্তিমূলক সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সেলাইয়ের কাজ শিখে দেশের জাতীয় পতাকা বানিয়ে তা বিক্রি করে আর্থিক স্বাধীনতা পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
বছরের এই দিনটিতে যে জিনিসটির সব থেকে বেশি চাহিদা থাকে তা হল দেশের গর্বের জাতীয় পতাকার। স্বাধীনতা দিবস এবং প্রজাতন্ত্র দিবসে সবথেকে বেশি বিক্রি হয় জাতীয় পতাকা। গেরুয়া সাদা সবুজ এই তিনটি কাপড়ের সমন্বয় দেশের জাতীয় পতাকা নির্মিত হয় সকলেরই জানা। আর এই পতাকা তৈরি করেই আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
নদীয়া জেলার শান্তিপুরের মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়ের এই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর হাতের সেলাইয়ের কাজ শিখে স্বনির্ভর হচ্ছে অসংখ্য শিক্ষার্থীরা। শুধু সেলাই নয় সঠিকভাবে কাপড় কাটা সেলাই করা হুক বোতাম বসানো, নতুন শাড়িতে ফলসপাড় লাগানো পিকো করা এবং থান কাপড়কে বস্ত্রের আকারে রূপ দেওয়ার ছ মাসের প্রশিক্ষণ নেয় তারা। কাপড় সুতো এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য সামান্য কিছু সামান্য সরকারী স্টাইপেন্ডও পায় তারা।
শিক্ষিকা সাধনা ঘোষ জানান, এই বছরেও প্রায় ২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের মধ্যে ২০ জন পরীক্ষা দেবে। ছমাসের কোর্সের পরে পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং পরীক্ষার শেষে সরকারি শংসাপত্র দেওয়া হয়। যাতে সেই শংসাপত্র সুবাদে তারা অন্য কোন বড় জায়গায় চাকরি অথবা নিজের কোনও ব্যবসা চালু করে স্বনির্ভর হতে পারে”। তবে বেশিরভাগ, এই বিদ্যালয় বা অন্য বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে এই প্রশিক্ষণ নেয়। কেউবা কলেজে পড়াকালীন। শেখার সাথে সাথেই তারা নিজে নিজে এলাকায় পুরনো জামাকাপড় সেলাই করে হাত খরচের অর্থ রোজগার করতে পারে। এমনকি ঘরের গৃহবধূরাও আসে সেলাই শিক্ষা নিতে, তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই যদিও প্রতি ব্যাচে তাদের পাওয়া যায় না ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইতিমধ্যেই মেয়েদের ছায়া ব্লাউজ কুর্তি প্যান্ট, যাবতীয় পোশাকের পাশাপাশি শুরু করা হয়েছে জাতীয় পতাকা বানানোর উদ্যোগ। সেলাই মেশিনে বসিয়ে গেরুয়া সাদা এবং সবুজ কাপড় সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে দেশের জাতীয় পতাকা বানানো। আর এই পতাকা উড়বে বিভিন্ন স্কুলের প্রাঙ্গনে স্বাধীনতা দিবসের দিন। তারা চান বিভিন্ন সংস্থারা বিশেষ করে অন্যান্য বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষরা এগিয়ে আসুক তাদের থেকে পতাকা কিনতে, যাতে দেশের স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু এলাকার মেয়েরাও আর্থিক স্বাধীনতা পায়।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পরে চাকরির যা অবস্থা, তাতে এক প্রকার নিরাশ হয়েই এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাই এর কাজ শিখতে এসেছি। নিজের পড়ার জন্য চুড়িদার সহ বিভিন্ন পোশাক বানাতে পেরে তারা খুশি। এবারে পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্য আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধবীদের বানিয়ে দিয়ে মেলে বেশ কিছু অর্থ। প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফলে পাড়া-প্রতিবেশী থেকেও বেশকিছু খুচরো অর্ডার আসে যার থেকে দু এক পয়সা কামাই হয়। যদি সরকারি বা কোন সংস্থা থেকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হয় তাহলে খুবই উপকার হয়”।
উল্লেখ্য মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়া এবং বিশেষ করে দেশবাসীকে আত্মনির্ভর হওয়ার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিশেষত, হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পোস্ট অফিসে বিক্রি হচ্ছে জাতীয় পতাকা।
অন্যদিকে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মাত্র চারটি মেশিন, সেক্ষেত্রে মেশিন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। দিদিমনির কথা অনুযায়ী,অনেকেই সুদক্ষ কারিগর হওয়া সত্ত্বেও অর্থাৎ ভাবে মেশিন কিনতে পারে না। সেক্ষেত্রে এককভাবে অথবা সেলফ হেল্প গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হলে, তাদের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষিকা সরকার পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ।
এখন দেখার বিষয় এবারে স্বাধীনতা দিবসে নিজেদের বানানো জাতীয় পতাকা বিক্রি করে কিছুটা হলেও আর্থিক স্বাধীনতার স্বাদ তারা পায় কিনা, তা হয়তো সময়ই বলবে।