মলয় দে নদীয়া :-১৯৪৪ সালে ২০শে আগস্ট মুম্বাই তে জন্মগ্রহণ এবং আজকের দিন অর্থাৎ একুশে মে ১৯৯১ তে শ্রী পেরামবুদুরে দুষ্কৃতীদের মানব বোমায় নিহত হন তিনি।
রাজীব কথার অর্থ পদ্মফুল । তিনি প্রকৃত অর্থেই ছিলেন পদ্মফুলের মতো সুন্দর । তিনি রাজীব গান্ধী । ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী । আধুনিক , বিজ্ঞানমনস্ক , তরুণ প্রজন্মের এক নেতা । তিনি ছিলেন আধুনিক ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র স্হপতি ও রূপকার ।
ভারতের ঐক্য ও অখন্ডতা বজায় রাখা ছাড়াও দেশকে একবিংশ শতকে পৌঁছে দেওয়া ছিল আত্মপ্রচার বিমুখ , দূরদর্শী রাজীব গান্ধীর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর মায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর মাত্র ৪০ বছর বয়সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন শ্রী রাজীব গান্ধী। তিনি ছিলেন দেশের তরুণতম প্রধানমন্ত্রী। দেশের তরুণতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজীব গান্ধী নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে জাতির ইতিহাসে এক বিরল নজির স্থাপন করেন। তাঁর মা নিহত হওয়ার পরে শোকের পরিবেশ কাটিয়ে উঠে তিনি লোকসভা নির্বাচনের নির্দেশ দেন। নির্বাচনে কংগ্রেস অতীতের সমস্ত নজির ম্লান করে দিয়ে বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। লোকসভার ৫০৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস দখল করে নেয় ৪০১টি আসন ৷ দেশের ৭০ কোটি মানুষের নেতা হিসেবে এভাবেই রাজনৈতিক জীবনে তাঁর উত্থান।
রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এক পরিবারের উত্তরসূরী হয়েও রাজনীতিতে অংশগ্রহণে প্রথমে তাঁর ছিল তীব্র অনীহা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তীকালে দেশের রাজনীতিতে এই পরিবারের নিবিড় যোগাযোগ ছিল প্রায় চার প্রজন্মের। মায়ের অকাল মৃত্যুর পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও খানিকটা বাধ্য হয়েই রাজীব রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ব্যক্তিগত তথা জাতীয় শোকের মুহূর্তে স্হৈর্য , সংযম ও সম্ভ্রমের সঙ্গে তিনি দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
রাজীব গান্ধীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২০ আগস্ট বোম্বাইতে। বাবা ফিরোজ গান্ধী , মা ইন্দিরা গান্ধী ৷ ভারতের স্বাধীনতা লাভ এবং তাঁর মাতামহ প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় রাজীবের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয় মাতামহের সঙ্গে দিল্লীর তিনমূর্তি ভবনে । দুন স্কুলে পড়াশোনা করেন । এরপর কেম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে । লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজেও কিছুদিন পড়েছেন। কেম্ব্রিজে থাকার সময় ইতালিয় যুবতী সোনিয়া মাইনোর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও প্রণয় । ১৯৬৮ সালে তাঁরা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন ।
তিনি ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী । এছাড়াও তাঁর সখের মধ্যে ছিল ফটোগ্রাফি ও অ্যামেচার রেডিও । সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ ছিল বিমান চালনায় । ১৯৮২ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস সফলভাবে সম্পন্ন করে তিনি দক্ষতা ও সমন্বয়ের বিশেষ দৃষ্টান্ত স্হাপন করেন । সুভদ্র , মার্জিত স্বভাব , মৃদুভাষী রাজীব গান্ধী নবোদয় বিদ্যালয় , অবৈতনিক শিক্ষা , লাইসেন্স প্রথা হ্রাস , কম্পিউটারের ব্যবহার , টেলিযোগাযোগ ব্যবস্হার উন্নতি , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করে গেছেন । ‘বোফর্স ‘ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ১৯৯১ সালের ২১ মে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এক আত্মঘাতী মানববোমা হামলায় মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তিনি অকালে প্রয়াত হন । মৃত্যুর পর ‘নব ভারতের রূপকার’ রাজীব গান্ধীকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করা হয়।
এই দিনটি গভীর সার্থকের সাথে পালন করে শান্তিপুর শহর কংগ্রেস। আজ শান্তিপুর বাইগাছি মরে তার আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করতে উপস্থিত হন শহর কংগ্রেস নেতৃত্ব।
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সবার চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন কাউন্সিলরগণ উপস্থিত হয়ে মাল্য দান করেন।
কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয় রাজীব গান্ধী খেলরত্ন সহ বিভিন্ন নামাঙ্কিত তৎকালীন প্রকল্প এখন বদলে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে সাধারণ মানুষের মনের থেকে জাতীয় কংগ্রেস এবং রাজীব গান্ধী ইন্দিরা গান্ধী নাম মুছে দেওয়া যায় না তার জ্বলন্ত প্রমাণ কর্ণাটক।
অন্যদিকে পুরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ জানান, আজকের দিনটি বিশেষ শোকের। যেমন দেশের কাছে রাজীব গান্ধী চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন, তেমনই শান্তিপুরের ক্ষেত্রে অজয় দেও। পুরসভা স্থানীয় এবং দেশের এই দুই ক্ষেত্রে আদর্শবান জননেতার প্রতি সম্মান জানাতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।