আগামীতে কি বিলুপ্ত হতে চলেছে দেশীয় কাঁচামিঠে আম?

Social

মলয় দে নদীয়া :- বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূষণ এবং অত্যাধিক রাসায়নিক সার ঔষধ কীটনাশকের ব্যবহারেই হয়তো, দেশীয় ধরনের আনাজ শাকসবজি ফুলের একদিকে যেমন ফলন কমেছে অন্যদিকে গুণগত মানও কমে যাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোগে।

অথচ শংকর বা হাইব্রিড জাতীয় ফলের বীজে উৎপন্ন গাছ অথবা কলম বাধা গাছের সে ধরনের সমস্যা খুব একটা চোখে পড়ছে না। জন্মসূত্রেই বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক অভ্যাসের ফলে প্রাকৃতিক নিত্য নতুন রোগ প্রতিশোধক হয়ে উঠছে এ ধরনের গাছ।
সম্প্রতি কাঁচা মিঠে আমের গায়ে এক ধরনের কালো দাগ হয়ে যাচ্ছে, আটি হওয়ার আগেই যাচ্ছে হলুদ হয়ে। কখনোবা ফেটে কখনো বোঁটা শুকিয়ে খসে পড়ছে মাটিতে।
কতদিন ধরে যে সমস্ত কৃষকরা আম চাষ করে আসছেন, তারা জানাচ্ছেন অন্যান্য আমে পাকার আগে খুব কম পরিমাণে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে ইদানিং তবে কাঁচা মিঠা তে সবচেয়ে বেশি। তার সাথে বিভিন্ন দেশি প্রজাতির আম নষ্ট হচ্ছে এভাবে দাগ হয়ে। ওদিকে হাইব্রিডের আমের গুণগত স্বাদ এবং গন্ধে কম হলেও দেখতে ভালো তাই বাজারে সেগুলি চড়া দামে বিক্রি হলেও দেশী কাঁচা মিঠা আমের বাজার নেই।
তারা আশঙ্কা করছেন এভাবেই, হয়তো একদিন চিরতরে বিদায় নেবে দেশি কাঁচা মিঠে। তবে পূর্বের সেই স্বাদ আর সুগন্ধ এখন আর মেলেনা। এ বিষয়ে সার ঔষধর দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং আধিকারিকগণের কাছেও নাকি নেই কোনো উত্তর । মোটা টাকা করে খরচ করে ওষুধ কীটনাশক প্রয়োগ করে পুরোটাই লস হচ্ছে, হাইব্রিড কাঁচা মিঠা ৩০-৩৫ টাকা কেজি দাম পাওয়া গেলেও, দেশি এই দাগ ধরা আম স্থানীয় বাজারে ১০-১৫ টাকার বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

এমনই নানান অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন কয়েক পুরুষ ধরে আম চাষ করে আসা এ প্রজন্মের আম চাষী হামিদুল ইসলাম। তিনি বলেন অন্যান্য অনেক চাষীর সাথে তিনি আলোচনা করেছেন প্রত্যেকেরই এই একই সমস্যা। বিষয়টি জানতে আমরা পৌঁছেছিলাম কৃষাণ স্বরাজ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা দেশীয় বীজ সার এবং সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ষাটের দশক থেকে চাষের আন্দোলন করে আসা শৈলেন চন্ডী বলেন, যত দিন যাবে এ ধরনের সমস্যা বাড়তে থাকবে, অত্যাধিক পরিমাণে রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে। শুধুমাত্র দুই একটি জমি ভেষজ চাষ করলেই শুধু হবে না পার্শ্ববর্তী সমগ্র এলাকা জুড়ে বৃহৎ আকারে সকলেই যদি জৈব সারে ব্রতী হয় তাহলেই এর একমাত্র রেহাইয়ের পথ।
এমনকি ওই আম গাছ রোপনের আগে ওই জমিতে যে ধরনের চাষ হয়েছে তাতে রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে একদিকে যেমন মাটি তার নিজস্বতা হারিয়েছে অন্যদিকে বিভিন্ন ছোটখাটো উপকারী জীবাণুরা ধ্বংস হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে দুটোই কলম করে চারা তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই কারণে বর্তমান কোন হাইব্রিড গাছের ডালের সাথে করা কলমের গাছ জন্মসূত্রেই রাসায়নিক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। যা আজ থেকে ২০০ বা ৩০০ বছরের পুরনো কোনো কলমের গাছের ডালে নতুন করে কলম বেঁধে সাত গন্ধ গুণগত মান বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে সেই ধরনের গাছগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আরো বেশি।
শুধু আম নয় সমস্ত চাষের ক্ষেত্রে একদিন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে চাষীরা চাষে কোনো আগ্রহ দেখাবে না। তাই সকলকে একসাথে জৈব চাষ এবং রাসায়নিক বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে , ভবিষ্যতের কথা ভেবে। অল্প খরচে অথবা অল্প সময়ে বেশি ফল আশা করা, মানেই রাসায়নিকের প্রয়োগ আর সেক্ষেত্রে দূরে থাকাই বাঞ্চনীয়।

Leave a Reply