পঞ্চায়েত সদস্যা সেলাই করে, স্বামী টিউশন পড়িয়ে শাশুড়ি সবজি বিক্রি করে চালান সংসার !  সকলের ঘর হওয়ার পরেই, সরকারি ঘরের আবেদন করবেন ভাঙ্গা ঘরে বাস করা পঞ্চায়েত সদস্যা

Social

মলয় দে নদীয়া :-গৃহ আবাস যোজনা নিয়ে শাসকবিরোধী রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। বেশ কিছুদিন আগে নদিয়ার চাকদহ ব্লকের এক পঞ্চায়েত প্রধানকে মানুষের সাথে যোগাযোগ না রাখার কারণে ২৪ ঘন্টার মধ্যে, রিজাইন লেটার জমা করার কথা বলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নরমে গরমে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিকে এগোতে গিয়ে একদিকে যেমন তিরস্কার অন্যদিকে তেমন পুরস্কার রেখেছেন তিনি। গতকাল মেদিনীপুরের কেশপুরে একটি জনসমাবেশে যোগ দিয়ে , একজন পঞ্চায়েত সদস্যা মঞ্জু দলবেড়া ও তার স্বামী বুথ সভাপতি অভিজিৎ দলবেরার ভাঙ্গা ঘরের ছবি দেখিয়ে, সরকারি গৃহ আবাস যোজনায় নিজের নাম তালিকাভুক্ত না করার পুরস্কার স্বরূপ, তাদের একমাত্র মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব এবং ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব তিনি নিজে কাঁধে তুলে নেন।

কোথাও জেলা পরিষদের সভাধিপতির বোনের নামে ঘর কোথাও বা, পঞ্চায়েত প্রধান উপপ্রধান সদস্যদের নিজেদের নামেই ঘর, এমন নজির ভুরি ভুরি হলেও, মেদিনীপুরের কেশপুরের মতন দৃষ্টান্ত নদীয়ার শান্তিপুরেও আছে।

শান্তিপুর ব্লকের বাবলাপঞ্চায়েতের শ্যামনগর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য কল্পনা দুর্লভ শত দারিদ্রতার মধ্যে দিয়েও স্নাতক হয়েও, মেলেনি চাকরি , সংসার চালাতে বেছে নিয়েছিলেন সেলাইয়ের কাজ। বৃদ্ধ শশুর অসুস্থ শাশুড়ি বাজারে সবজি বিক্রেতা,গৃহস্থালির যাবতীয় কাজকর্ম সেরে,পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজ কর্ম, এবং মানুষের সেবা দিয়ে থাকেন সেলাই মেশিনে বসেই।
স্বামী মন্টু দুর্লভ এম এ পাস করে গ্রামের মাঝে বাচ্চাদের টিউশনি করেন, দুই মেয়েকে নিয়মিত পড়াশোনা করাতে বসার সাথেই। তপশিলি ভুক্ত হয়েও , মেলেনি চাকরি, তিনিও দীর্ঘদিন যাবত তৃণমূল কংগ্রেসের ওই বুথের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
কল্পনা দেবী বলেন, এখনকার ছেলেমেয়েরা তাও বিভিন্ন পড়াশোনার সহযোগিতা পাচ্ছে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্যাণে, আমরা যখন পড়াশোনা করেছি তখন এসব কিছুই ছিল না বই পর্যন্ত কিনে পড়াশোনা করতে হতো। বর্তমানে উপার্জন তিনজনে মিলে করি ঠিকই তবে, গ্রামের মানুষের সিংহভাগ তপশিলি জাতিভুক্ত এবং পিছিয়ে পড়া ভূমিহীন কৃষক। তাই সেলাইয়ের মজুরি ও যেমন ঠিক মতন দিতে পারেন না তেমনি ছেলেমেয়েদের টিউশনি পড়ানোর মাইনেও,বাধ্য হয়েই শাশুড়িকে বেছে নিতে হয় সবজি বিক্রির পথ।
স্বামী মন্টুদুর্লভ বলেন, নিজেরাই গৃহ আবাস যোজনার নাম লিখিয়ে রাখলে লোকে কি বলবে? এই গ্রামের ৪০০ পরিবার সকলেই অভাবী, পাকা বাড়ি কারোর নেই। এতদিন তো ঘরের সুযোগ ছিল না, পঞ্চায়েত থেকে ৩০০ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে, এরপরেও বাকি থাকবে আরো ১০০ জন, নিজের ঘরের ব্যাপারে তখন চিন্তা করা যাবে। তবে আগে মাটির দেওয়াল বর্ষা আসলেই ভেঙ্গে পড়তো, তাই কোন মতে টিন এবং টালি দিয়ে থাকার উপযোগী করে তুলেছি। তবে সামনে অনেক খরচ ছোট মেয়ে ক্লাস টু এ পড়ে, বড় মেয়ে বর্তমানে ক্লাস এইটে পড়ছে, প্রতিবছর ফার্স্ট হয়। দু’বছর পরেই মাধ্যমিক তাই, আমরা স্বামী স্ত্রী বাদেও দুজন ভালো শিক্ষক রাখার চেষ্টা করব। এরা নিজে পায়ে দাঁড়ালে ঘরবাড়ি একদিন ঠিক হয়ে যাবে।

Leave a Reply