ধোঁয়া বিস্কুট ! বিজ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে, অভিনব লক্ষী লাভের উপায় বের করল বেকার যুবক রাহুল বালা

Social

মলয় দে নদীয়া :- ফায়ার ফুচকা, আগুনে পানের যথেষ্ট আগ্রহী এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। নতুনত্ব পেছনে ছোটে তারা। আর বিভিন্ন মেলায় দোকানদারেরা হন্যে হয়ে খুঁজে তা জোগাড় করার চেষ্টা করে। উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষায় থাকে মেলা ভ্রমণে আসা মানুষের স্বাদ পূরণের মধ্য দিয়ে কিছু রোজগারের আশায়।

পোড় খাওয়া নয় , এক আনকোরা বেকার যুবক সদ্য নামা ব্যবসায় মেলার প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। তবে মুখে আগুন দিয়ে নয়! ধোঁয়া দিয়ে। পোশাকী নাম নাম , স্মোক বিস্কিট। শান্তিপুর নৃসিংহ পুর ৫২ হাত কালী পৌষ মেলায় কল্যাণী থেকে আগত রাহুল বালার দোকান প্রায় সারাদিনই খোলা, নাওয়া খাওয়ার ফুরসত নেই। সে জানিয়েছে বি এ দ্বিতীয় বর্ষের পড়াশোনা শেষ করে, ভালো উপার্জনের কোনো কাজই জোগাড় করতে পারিনি। পরিবারের বৃদ্ধ মা বাবা এবং ছোটো বোনের পড়াশোনার খরচের কিছুটা জোগাড় করে সংসারের হাল ফেরানোর চেষ্টা করে ছোটখাটো বিভিন্ন রকম কাজকর্ম করেছিল কয়েকমাস। এরপরেই লকডাউন, চেয়ে চিনতে ধার দেনা করে কোন রকমে দু বছর কাটানোর পর, এই নতুন ব্যবসায় নেমেছে সে। ইউটিউবে বিভিন্ন রকম ব্যবসার খবর নিতে গিয়ে, এই নতুনত্ব ব্যবসার খোঁজ পায় সে। শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে সে বিচার করেছে কোন বুজুরকি ভাওতাবাজি নয় , স্রেফ বিজ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে, অল্প পুঁজি লাগিয়ে উপার্জন করা সম্ভব যথেষ্ট। নাইট্রোজেন গ্যাসের দ্রবণে বিস্কুট ডুবিয়ে, তা মেলায় আনন্দ উপভোগ করতে আসা মানুষজনের মুখে পুরে দিতে পারলেই, মুখের উষ্ণতায় ঠান্ডা নাইট্রোজেন উদ্যায়ী হয়ে অনর্গল বেরিয়ে চলেছে ধোঁয়া। যা থেকে সে যেমন আনন্দ পাচ্ছে, ঠিক তেমনি তাকে দেখে মেলার অন্যরাও আনন্দ পেয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ঘটনাটি মোবাইল বন্দী করছে তার আসা অন্যেরা। আর এত মজা আনন্দ সামান্য দশ টাকার বিনিময়ে।
সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র বিকি হালদার মা বাবার সঙ্গে এসেছে মেলা দেখতে, স্মোক বা ধোঁয়া বিস্কুট এই প্রথম বার দেখতে পেয়ে, অন্য সবকিছু ছেড়ে একটাই আবদার করেছে বাবা-মার কাছে। তার মুখ থেকে অনর্গল নির্গত ধোয়া মোবাইল বন্দি করতে ব্যস্ত বাবা-মা।
শান্তিপুর ডাকঘর নিবাসী গৃহবধূ পায়েল সিকদারের বিবাহ হয়েছে সদ্য, স্বামীর সাথে মেলা দেখতে এসে এই বিস্কুট খাওয়ার পর নির্গত হওয়া ধোঁয়া বের করে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীল প্রকাশ করে বন্ধুদের সাথে খুশি ভাগ করে নেয়।
ঝুমা বিপাশা মনিকা সকলেই এক বিদ্যালয়ে পড়ে গৃহ শিক্ষকের সাথে মেলা দেখতে আসা, বায়না একটাই মাত্র দশ টাকার বিনিময়ে ধোঁয়া বিস্কুট। তারা জানায়, বিস্কুটের স্বাদ তো বিস্কুটের মতই। শুধুমাত্র মুখের মধ্যে একটু ঠান্ডা বোধ হচ্ছে, তবে স্বাদের পরিবর্তন নেই এতোটুকু। শিক্ষকের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছে, আমরা বাতাসে বেশিরভাগ থাকে নাইট্রোজেন। তাই এটা কোন ক্ষতিকারক বিষয় নয়।
আর এভাবেই একের পর এক, দশ টাকা উড়ে এসে মনে হচ্ছে দোকানী রাহুল বালার ভান্ডারে।
তবে শুধু রাহুল একা নয়, এই ব্যবসা নিয়ে এই মেলায় হাজির হয়েছে আরো দুইজন। তবে নিজেদের মধ্যে বোঝাবুঝি করে আগের জাগুলি মেলার মতো মেলার তিন প্রান্তে তিনজন বসে মাতিয়ে রেখেছে গোটা মেলাকে।
বিষয়টি শিশু-কিশোরদের উচ্ছাস ছাড়িয়ে শুধুমাত্র যুবক যুবতীদের আনন্দের সীমারেখা তেই বন্দি নেই। মাঝ বয়সি বৃদ্ধ বৃদ্ধা থেকে থেকে অতিবয়স্ক একটু ফাঁকা হলে, ভিড় এড়িয়ে তারাও একবার মজার এই বিস্কুট মুখবন্দি করতে এগিয়ে আসছে।

Leave a Reply