মলয় দে নদীয়া :-নদীয়ার শান্তিপুর সুত্রাগড় অঞ্চল জগদ্ধাত্রী পূজার জন্য বিখ্যাত। শান্তিপুরেরই বাকি অঞ্চল গুলির মধ্যে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন অপেক্ষাকৃত কম।
তবে শহরের বেড়পাড়া রায়বাড়ির পুজো বহু প্রাচীন। তাই নয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণবীয় মতে , এই পুজোতে কোন বলি হয় না। সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী এবং নবমীর সমস্ত পুজো সম্পন্ন হয় একই দিনে। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় ১৯৪৫ সাল থেকে, বংশপরম্পরায় মুশিদাবাদের একই পরিবারের ঢাকি, বর্তমানে প্রদীপ পালের ঠাকুর তার আগে তাদেরই পূর্বপুরুষ নির্মাণ করেছেন জগদ্ধাত্রী প্রতিমা এবং শান্তি গোপাল গোস্বামী বাড়ির পুরোহিতগণ বংশানুক্রমিক ভাবে আজও পৌরহিত করে আসছেন এই পরিবারে।
বাংলাদেশে রাজশাহী গোড়ামারা অঞ্চলে বহু প্রাচীন ছিল এই পুজো। তবে প্রামাণ্য হিসাবে ইংরেজি ১৯০০ সালে প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় ওই অঞ্চলের একটি বাজারসহ জগদ্ধাত্রী পূজোর মণ্ডপ এবং বসতবাড়ি ক্রয় করে পুনরায় পুজো প্রতিষ্ঠা করেন। পিতার মৃত্যুর পর সে সময় দেশের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শান্তিপুর বেড় পাড়ার এক ব্যক্তির সাথে স্থাবর সম্পত্তি পরিবর্তিত করেন চন্দ্র রায়ের ছেলে আশুতোষ রায়। তবে বাংলাদেশের সেই জগদ্ধাত্রী বেদীর ইঁট খুলে নিয়ে এসে, শান্তিপুর বের পাড়ার বাড়িতে মন্দির স্থাপন করেন। সেই থেকে এই পুজো বিখ্যাত রায় বাড়ির পূজো হয়ে ওঠে। একসময় সুবিশাল এই বাড়িতে নিজেদের পরিবার সদস্য সংখ্যাই ছিল দুই শতাধিক, তারা একই সাথে বসবাস করতেন। বর্তমানে কর্মের সুবাদে পরিবার সদস্যরা অন্যান্য বিভিন্ন জায়গায় বসবাস স্থাপন করলেও আজও রায় পরিবারের উত্তরসূরি দশটি পরিবার বাস করে এই বাড়িতেই। তবে জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে কলকাতা এবং এ রাজ্যে বসবাসকারী অনেক সদস্য আজও উপস্থিত হন।
বিগত কয়েক দশক আগেও, বহিরাগত পরিবার সদস্যরা জগদ্ধাত্রী পুজোতে এসে শান্তিপুরের বিখ্যাত ভাঙ্গা রাস দেখে একেবারে ফিরতেন বাড়িতে। তবে এখন শান্তিপুরের রাস দেখা উপলক্ষে না আসলেও জগদ্ধাত্রী পুজোতে অনুপস্থিত থাকেন না কেউই। পুজোর আগের দিন পুজোর দিন এবং বিসর্জন এই তিন দিন একসাথে পাত পড়ে এখনো শতাধিক পরিবার সদস্যদের।