নেশা হয়েছে পেশা ! সাতষট্টি বছর বয়সেও দেবী দুর্গার রূপদান করেন কৃষ্ণনগরের মহিলা মৃৎশিল্পী গীতা পাল

Social

প্রীতম ভট্টাচার্য্য,নদীয়া : হাতে আর মাত্র দিন দশেক। আপামর বাঙালি মেতে উঠবে দুর্গোৎসবে। আটপৌরে রাস্তার পাশে সামান্য জীবিকাকে আঁকড়ে ধরে জীবনযাপন করে চলেছেন নদীয়ার এই মহিলা মৃৎশিল্পী।

অন্ধসমাজের আজকের নারী সমাজের দৃষ্টান্ত কৃষ্ণনগরের মহিলা মৃৎশিল্পী গীতা পাল। অভাব কে সঙ্গী করেই তার হাতে একটু একটু করে প্রাণ পায় শরতের ঊমা।হাসি মুখে তিনি তার শিল্পী জীবনের সাতষট্টিটা বছর পার করে দিয়েছেন। পিতা দাশরথী পালের কাছে তের বছর বয়সে তাঁর এই কাজের হাতেখড়ি। ছোটবেলায় খেলার ছলে বানাতেন দেবদেবীর মূর্তি।আস্তে আস্তে বাড়ির একমাত্র কন্যা কাঠামো থেকে রুপদান করতে লাগলেন দেবী দুর্গার। সারাবছর মূর্তি গড়েন নিজেই। কৃষ্ণনগরের আনন্দীময়ী তলার, রথতলার কুমোড়পাড়ায় তার বসতবাড়ি, একচিতলে একটি ছোট টিনের চালা এখন তার মূর্তি গড়ার কারখানা। সারা বছর দূর্গা, কালি, সরস্বতী ও বিভিন্ন দেবদেবী তৈরী করেন।এবছর কুড়িটি দূর্গা মূর্তি তিনি বানিয়েছেন। শহর ও জেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ গুলিতে তার তৈরী প্রতিমা পূজিত হয়। কাঠামো থেকে চক্ষুদান তিনি নিজেই করেন। বয়সের ভারে এখন দুজন কর্মচারী তার সাথে এই ঠাকুরগড়ার কাজে হাত দেন।

নিজে হাতে লক্ষ্মীর প্যাঁচা বানাতে বানাতে গীতা পাল বলেন “ঠাকুর গড়তে আমার খুব ভালো লাগে, নিজে মেয়ে হয়ে মায়ের এই রুপদান আমার কাছে বিশ্বজয় করার মত। সেভাবে কোনো সাহায্য নেই, ঘরের পুঁজি ও মহাজনদের কাছে অগ্রিম নিয়ে এই কাজ করি। সারা বছর অর্ডার ভালোই থাকে,আজ এই কাজে মহিলাদের দেখা মেলা ভার।নতুন প্রজন্ম মোবাইলে ব্যাস্ত, কেউ আর এই কাজ করতে চাইছে না। আমি চাই মেয়েরা এগিয়ে আসুক। অন্যান্য বারের তুলনায় এই বছর খরিদ্দার এর সংখ্যা বেশি কিন্তু ২০টি বেশি রাখার জায়গা নেই তাই বানাইনি”।

আশেপাশের অনেকেই বলেন গীতা দিদি আমাদের কাছে প্রেরনা।তিনি যে এই বয়সেও এই কাজ করছেন তা সকল শিল্পীর কাছে দৃষ্টান্ত।এই ভাবেই বেঁচে থাক আটপৌরে দুর্গারা, বেঁচে থাক তাদের স্বপ্ন, মাটির দেশের শিল্পী গীতা পালকে কুর্ণিশ জানায় নিউজ সোশ্যাল বার্তা ।

Leave a Reply