মলয় দে নদীয়া : -আজ বিপত্তারিনি দেবীর আরাধনা লক্ষ্য করা গেলো বিভিন্ন মন্দিরে । সকাল থেকেই বিভিন্ন মন্দিরে নানাবিধ ফলমূল ও লাল সুতোর ফেটি এবং তার সাথে দূর্বাঘাসের বন্ধন সহ গৃহবধূদের উপচে পড়া ভিড় প্রত্যক্ষ করা গেলো । এককথায় বলা যেতে পারে এটিও এক প্রকার শক্তির আরাধনা ।
তবে শান্তিপুর যশোদা নন্দন প্রামাণিক স্ট্রিটের দিন দয়াল প্রামাণিকের বাড়ীর রাধা রমন মন্দিরে অর্থাৎ রাধা কৃষ্ণ বিগ্রহের যুগল মূর্তির সামনে ঘট স্থাপন করে পূজিত হলেন দেবী বিপত্তারিনি । এটাও বলা যেতে পারে শান্তিপুরে শাক্ত ও বৈষ্ণবের এক অপূর্ব মিলবন্ধন । সাধারণ ভাবে বিভিন্ন কালী মাতার মন্দিরে এই বিপত্তারিনী দেবী মাতার আরাধনা করার রীতি বলবৎ রয়েছে । কিন্তু শান্তিপুর পটেস্বরী স্ট্রিটের পিছনে জমিদার দিন দয়াল প্রামাণিকের বাড়ীর রাধা রমন বিগ্রহের মন্দিরে এই বিপত্তারিনির আরাধনা শান্তিপুরে বৈষ্ণব ও শাক্তের মিলন ক্ষেত্রের আরেকটি উদাহরণ হিসাবে একটি নতুন মাত্রা যোগ করলো ।
বিপত্তারীনি দেবী হলেন পশ্চিমবঙ্গ , উড়িষ্যা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পূজিত হিন্দু দেবী । তিনি একজন সংকট নাশিনী দেবী এবং দেবী দুর্গা অবতারের অন্যতম । সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মূলত বিভিন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য এই দেবীর পূজা অর্চনা করেন । আসাড় মাসের সোজা রথ থেকে উল্টো রথের মধ্যে মঙ্গল বার ও শনিবারে মহিলারা বিপত্তরিনী ব্রত পালন করেন ।
সনাতন ধর্মের বিধান অনুযায়ী যিনি দুর্গা তিনিই বিপত্তাড়িনি , পুরাণে তিনি আবার দেবী কৌশিকী নামেও পরিচিত । এই জয়দূর্গা বা দেবী কৌশিকী বা বিপত্তারীনী হলেন পঞ্চ দেবতার একজন । যদিও দেবীর বিভিন্ন প্রকার রূপ বিদ্যমান । উত্তর ভারতে অষ্টাদশ রূপের ধ্যান ও পূজা করা হয় , কোথাও দশভূজা রূপেও তিনি পূজিত হন । এখানে পূজার উপাচার হিসাবে মোট ১৩ প্রকার ফল , ফুল , মিষ্টি , পান , সুপারি, লবঙ্গ, এলাচ প্রভৃতি অর্পণ করার রীতি বিদ্যমান রয়েছে ।
আবার গ্রামাঞ্চলে এই পূজা চলে চার দিন ধরে । প্রথম দিন দেবীর আরাধনায় মেয়েরা দন্ডী কাটে , তারপর দুই রাত্রি ব্যাপী চলে বাংলা লোকগান , ভজন এবং কীর্তন । চারদিনে দেবীর বিসর্জন পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ।
এই পুজো মূলত মেয়েরা উপবাস করে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বিপত্তারিনির লাল সুতো ও দূর্বা ঘাস দিয়ে তৈরি এক বিশেষ তাগা পুরুষ দের হাতেও পরিলক্ষিত হয় । পুজোর শেষে হাতে এই বিশেষ তাগা পড়ার বিশেষ রীতি রয়েছে সর্বত্র । এটাই এই পূজোর প্রধান বিশেষত্ব । যদিও অন্যান্য পুজোর মত এই পুজোতেও অঞ্জলী দেওয়া , ব্রতকথা পাঠ শোনা , পুজো শেষে প্রসাদ বিতরণ প্রভৃতি বিশেষ রীতি রয়েছে । অন্যান্য জায়গার মত জমিদার দিন দয়াল প্রামাণিক বাড়ীর রাধা রমন বিগ্রহের সামনেও এমন চিত্রই প্রত্যক্ষ করা গেলো ।