মলয় দে নদীয়া:- ইংরেজিতে Indian People’s Theatre Association বা IPTA, বাংলায় ভারতীয় গণনাট্য সংঘ হল বামপন্থী দলগুলোর নেতৃত্বে পরিচালিত থিয়েটার-শিল্পীদের সংগঠন। এটির লক্ষ্য ছিল ভারতের জনসাধারণের মধ্যে বামপন্থী মতাদর্শ প্রচার এবং তাদের সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটান। এটি ছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখা।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে বোম্বাইয়ে (অধুনা মুম্বাই) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে ফ্যাসিবিরোধী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য একটি সাধারণ সংঘ তৈরি করার জন্য। এরই ভিতর দিয়ে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা সংক্ষেপে আই.পি.টি.এ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন কায়ফি আজমী, শান্তি বর্ধন, প্রেমধাবন, বলরাজ সাহনী, শংকর, শৈলেন্দ্র, পৃথ্বিরাজ কাপুর, অমর শেখ প্রমুখ। আর বাংলার প্রাদেশিক কমিটিতে মনোনীত হন সুনীল চ্যাটার্জী, দিলীপ রায়, সুধী প্রধান, বিজন ভট্টাচার্য, শম্ভু মিত্র, সুজাতা মুখার্জী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, স্নেহাংশু আচার্য, বিষ্ণু দে, বিনয় রায় প্রমুখ।
ভারতীয় গণনাট্য সংঘের নানাবিধ উদ্দেশ্যের মধ্যে ছিল নাটকের মধ্য দিয়ে মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, শোষণের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ। এই আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ লেখক শিল্পী নাট্যকর্মীরা এগিয়ে আসেন এবং নতুন নতুন নাটক রচিত ও মঞ্চস্থ হয়। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে মঞ্চস্থ হয় পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় রচিত বিজন ভট্টাচার্য রচিত নাটক ‘আগুন’। এ নাটকটি ‘নাট্য ভারতী’র মঞ্চে (বর্তমান গ্রেস সিনেমা) অভিনীত হয়। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি স্টার থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয় বিজন ভট্টাচার্যের ‘জবানবন্দী’। একই সময়ে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের হোমিওপ্যাথি অভিনীত হয়। এই ধারার অন্যতম নাটক ছিল ১৯৪২ খ্রিষ্টব্দের আগস্ট বিপ্লব-এর প্রক্ষাপটে ‘নবান্ন’। নবান্ন অভিনীত হয় ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ অক্টোবর।
১৯৪৬-৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তেভাগা আন্দোলনে কমুউনিষ্ট পার্টির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল। সেই সূত্রে গণনাট্য সংঘের নাট্যকার, অভিনেতা, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পীরা গণজাগরণে উদ্দীপনা জুগিয়েছিলো। বিভিন্ন রাজ্যে এই সংগঠনের শাখা আঞ্চলিক স্তর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।
80 তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে গতকাল সারা রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল এই উপলক্ষে।
নদীয়ার শান্তিপুরে সকালের শিশুদের মধ্যে অঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সান্ধ্যকালীন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয় প্রতিষ্ঠা দিবস। গণনাট্য সংঘের শান্তিপুর কমিটির সদস্যরা বর্ণনা করেন সংগঠনের রাজ্য এবং শান্তিপুর ভিত্তিক অতীতের বিভিন্ন ঘটনাবলী। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আগামীর পরিকল্পনা।