মলয় দে নদীয়:- বঙ্গদেশে পুতুলনাচের ইতিহাস কত প্রাচীন তা সঠিক জানা যায় না, তবে পনেরো শতকে রচিত ইউসুফ-জুলেখা কাব্যে এর প্রথম উলেখ পাওয়া যায়। তখন পুতুলনাচ চিত্তবিনোদনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল।কাঠ-কাপড়-শোলা নির্মিত ও বসন-ভূষণে সজ্জিত এক বা একাধিক পুতুল নিয়ে এক শ্রেণির পেশাদার শিল্পী এরূপ নৃত্যাভিনয় দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা হাতে বাঁধা সুতার সাহায্যে পুতুলের নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে নিজেদের মনেরই বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। বাজনাদার ঢোল, মাদল, কাঁসি ও বাঁশি বাজান এবং শিল্পী গান গান ও পুতুল নাচিয়ে সে গানের ভাব ফুটিয়ে তোলেন।
বাংলায় পুতুলনাচের তিনটি ধারা প্রচলিত: ডাঙের পুতুল , সুতাটানা পুতুল এবং দস্তানা পুতুল । প্রথম দুটি ক্ষেত্রে নৃত্য ও অভিনয়ের মাধ্যমে পালাগান পরিবেশন করা হয়। সাধারণত রাধাকৃষ্ণ ও রামসীতার পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে এসব পালা রচিত হয়। সমসাময়িক সামাজিক ঘটনা নিয়েও পালা রচিত হয়। ধর্ম ও নীতিশিক্ষা এসব পালার মুখ্য উদ্দেশ্য, সেই সঙ্গে আনন্দ বিধানেরও উপাদান থাকে। পালার ফাঁকে ফাঁকে ‘সখি-পুতুলে’র একক নাচ দেখানো হয় দর্শকদের বাড়তি আনন্দ দেওয়ার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনায় ডাঙের পুতুল এবং নদীয়া জেলায় সুতাটানা পুতুলের নাচ আজও প্রচলিত।
নারীপুরুষ দুটি পুতুলের নাচ দস্তানা পুতুলনাচ। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর ও বর্ধমানের কাহার শ্রেণির কিছু লোক এ ধরণের নাচ দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। একজন শিল্পী দুহাতে দুটি পুতুল নিয়ে নিজেই গান করে আর পুতুল নাচান। হাল্কা বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ ও কৌতুকরস সৃষ্টি করে দর্শকদের আনন্দ দেয়াই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। এতে পৌরাণিক বিষয় থাকলেও লৌকিক দিকটাই প্রাধান্য পায়।
নদীয়ার দত্তপুলিয়া এলাকার বড়বড়িয়া কলোনী গ্রামে এখনো বেশ কয়েকটি পরিবার এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। তারা জানাচ্ছেন সরকারি শিল্পী কার্ড এবং বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে তাদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই হারিয়ে যাওয়া পুতুল নাচ আবারও নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। নদীয়া শান্তিপুর বড় বাজার এলাকায় ব্রহ্মা পুজো উপলক্ষে আগত পুতুলনাচের একটি দলের সাথে কথা বলে এমন টাই জানতে পারলাম আমরা।