মলয় দে, নদীয়া : উৎসবের শহর শান্তিপুর থানা অন্তর্গত ফুলিয়ার কৃত্তিবাসে অনুষ্ঠিত হলো নবম দোল, এই দোল উৎসবকে মূলত কৃত্তিবাসের দোল হিসাবে অভিহিত করা হয় । আবার অনেকে এই দোল উৎসবকে কানাই বলাই এর দোল উৎসব বলেও অভিহিত করেন । দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে কৃত্তিবাস দোল উৎসব কমিটির নেতৃত্বে বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং এই মাঠ প্রাঙ্গণে সুবিশাল মেলা । সকাল থেকে এই অঞ্চলে এমন কিছু জনসমাবেশ না ঘটলেও মূলত দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জমায়েতে দোল উৎসবের মেলা হয়ে ওঠে কোলাহল পূর্ণ ।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় বাল্মীকি রামায়ণের রচয়িতা , কিন্তু রামায়ণের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ অনুবাদক ছিলেন কবি কৃত্তিবাস ওঝা । তবে কৃত্তিবাসের জন্ম সাল নিয়ে বিভিন্ন প্রকার মতভেদ থাকলেও তার জন্ম আনুমানিক ৩৮১ খ্রিস্টাব্দ এবং মৃত্যু ১৪৬১ সাল হিসাবে ধরা হয় । কবি কৃত্তিবাসের জীবনী সূত্রে জানা যায় তার বাবা ছিলেন বনমালী ও মাতা ছিলেন মালিনী দেবী । কৃত্তিবাস ছিলেন রারী ব্রাহ্মণ । মধ্যযুগে বাংলার সেরা কবি , রামায়ণের অনুবাদক ও রাম পাঁচালীর রচয়িতা ছিলেন তিনি । যদিও বিভিন্ন ভাষাতেই রামায়ণের অনুবাদ হয়েছে কিন্তু তা সত্বেও বাংলা ভাষায় রামায়ণের অনুবাদকে ই শ্রেষ্ঠ অনুবাদ হিসাবে মানেন অধিকাংশ কবি সাহিত্যিকেরা । স্বাধীনতার পরবর্তীকালে তত্কালীন রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে ফুলিয়া য় কৃত্তিবাসের জন্ম ভিটেতে প্রায় বিঘেখানেক জমিতে গড়ে উঠেছিল কৃত্তিবাস ও রামায়ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখার তথ্যমূলক সংগ্রহশালা ।
এক সময়ে কবি কৃত্তিবাসের জন্ম তিথিতে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কবি ও সাহিত্যিক গণ । তবে কথিত আছে এক সময়ে এই অঞ্চলে কবি কৃত্তিবাসের স্মরণসভার অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ডাকা হয়েছিল । শোনা যায় তিনি তার শারীরিক অসুস্থতা র কারনে এখানে উপস্থিত থাকতে পারেন নি । যদিও উক্ত বিষয়টি বই এর পৃষ্ঠায় ছাপা হলেও পরবর্তী কালে এই লেখাটির কোনো হদিস পাওয়া যায় নি । তবে বর্তমানে কবি কৃত্তিবাস কে স্মরণ করেই অনুষ্ঠিত হয় এই অঞ্চলের দোল যাত্রা এবং এই কারনে এইটি বেশিরভাগ মানুষের কাছে কৃত্তিবাসের দোল বলেই পরিচিত ।