মলয় দে, নদীয়া :- ফাল্গুন মাস পড়ার সাথে সাথেই শান্তিপুরের বাগ আঁচড়া গ্রামে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী শুরু হয়েছে বাগ দেবীর মেলা ও দেবীর আরাধনা । ইতিহাস সুত্রে জানা যাচ্ছে শান্তিপুর শহরের ডাকঘর মোড় থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে বাগ আঁচরা গ্রামে আনুমানিক ৫০০ থেকে ৭০০ বছর আগে থেকে এই দেবীর আরাধনার সূচিত হয় । তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে এটি চৈতন্য পূর্ববর্তী সময় থেকেই এই বাগ দেবী মাতৃ আরাধনার সূচনাকাল । চৈতন্য পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশের যশোরের জমিদার চাঁদ রায়ের কন্যা অপহৃত হয় তারই বিশ্বস্ত সেনাপতি কর্তৃক । এমত পরিস্থিতিতে চাঁদ রায় তার কুলো গুরু রঘুনন্দন বন্ধোপাধ্যায় কে নিয়ে বাগ আঁচড়ায় চলে আসেন । এখানেই জমিদার চাঁদ রায়ের কুলো গুরু রঘুনন্দন বন্ধ্যপাধ্যায় তন্ত্র সাধনা শুরু করেন এবং সিদ্ধিলাভ করেন ফাল্গুন মাসের কোন অমাবস্যায় মঙ্গলবারে । এই মন্দিরে এখনো পঞ্চ মুন্ডির আসন বিদ্যমান , একসময়ে এই অঞ্চলটি ছিল মহাশ্মশান । তত্কালীন সময় থেকেই বাগ আঁচড়ায় এই বাগ দেবী মাতার আরাধনা সূচিত হয় বলে জানাচ্ছেন এই অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা ,পূজা পরিচালন কমিটির সদস্য এবং এই অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী দেবব্রত ব্যানার্জী ।
একসময় এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হতো সুরোধনী নদী । মন্দিরের পিছনের অঞ্চলে এখনও নদীর খাত বিদ্যমান , যদিও এখন এই অঞ্চল কে বাগ দেবীর খাল বলা হয় । এই অঞ্চলে এখনো যথেষ্ঠ চাষবাস হয় । যদিও মন্দিরের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম । তিনটি সুবিশাল গাছ এই বাগ দেবীর মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে । যদিও এখানে কোনো মাতৃ মূর্তি নেই , রয়েছে তিনটি ঘট । সেগুলো সারা বছর ধরে পুজিত হন মন্দিরের পুরোহিত কর্তৃক ।
ফাল্গুন মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে মহাসমারোহে মাতৃ আরাধনা করা হলেও স্থানীয় সুত্রে জানা যাচ্ছে এখানে নিত্য পুজিত হন বাগ দেবী মাতা । ফাল্গুন মাসের শনি ও মঙ্গলবার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষের বিপুল পরিমাণে মানুষের জমায়েত বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় । ভক্তরা তাদের মনোবাসনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এখানে ঢিল বাঁধেন । তবে বাগ দেবির মেলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো কালো রঙের ফাঁপা ঘোড়া আকৃতির পোড়া মাটির বাঁশির দেখা মেলে , এই বিশেষ বাঁশি শুধুমাত্র বাগ দেবীর মেলাতেই প্রতক্ষ্য করা যায় ।
তবে এই বাগ দেবীর মন্দিরের সামনে একটি সুপ্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পরিলক্ষিত হয় । ঐতিহাসিক ভাবে ও এলাকা সুত্রে জানা যায় এখানে একসময় রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তি ছিল , বর্তমানে সেটা এখন এই অঞ্চলের মুখার্জি পরিবার কর্তৃক পুজিত হয় । যেটা শান্তিপুরের বৈষ্ণব ও শাক্তের মিলনস্থলে র এক বিশেষ দৃষ্টান্তের সাক্ষ্য বহন করে । আবার এই মন্দিরের সম্মুখ অঞ্চলে পুরোনো ইন্দারা বিদ্যমান , এই ইদারার গায়ে ১৯১৬ সালের তৈরী সপ্তম এডওয়ার্ড সাহেবের নাম খোদাই করা রয়েছে । তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো কোনো রকম প্রচার ছাড়াই ফাল্গুন মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হাজার হাজার মানুষের জমায়েত ঘটে মন্দির প্রাঙ্গণে । বসে প্রচুর খাবারের ষ্টল ।