মলয় দে নদীয়া :- বিবাহ বাসরে শুভদৃষ্টি মালাবদল সিঁদুর দান সবকিছুই হয়েছে ,আমন্ত্রিতরাও আছেন, আছে ভুরি ভোজের ব্যবস্থাও। শুধু উপস্থিত নেই পুরোহিত মশাই। ভাবছেন এভাবেও কি বিবাহ সম্পন্ন হতে পারে? আলবাত হতে পারে।
নদীয়ার শান্তিপুরের বিজ্ঞান কর্মী রঘুনাথ কর্মকার এবং ভেষজ খাদ্যদ্রব্য প্রসাধনী উৎপাদক গোষ্ঠীর সদস্যা প্রগতি চন্ডী। গতকাল ছিলো তাদের বিবাহ, পাত্র রঘুনাথ কর্মকার স্থানীয় বিজ্ঞান ক্লাবের সম্পাদক, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীও। অন্যদিকে পাত্রী দেশীয় ফসল এবং বীজ সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কারপ্রাপ্ত বিষমুক্ত বাজার স্থাপন করা শৈলেন চণ্ডীর কন্যা প্রগতি চন্ডী। সে এবং তার পরিবারের মা বোন ছোটবেলা থেকেই বাবার কৃষাণ স্বরাজ সমিতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সঙ্গে যুক্ত।
মহিলা গোষ্ঠীর মাধ্যমে ভেষজ প্রসাধনী খাদ্য খাবার এবং আবিরের সফল বিক্রেতা। মাস ছয়েক আগে যখন প্রথম বিয়ের পাকা কথা হয় তখনই ঠিকুজি কুষ্ঠি নয় থ্যালাসেমিয়া রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে পরিপূরক হওয়ার সিদ্ধান্ততে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিলো।
এই রকম এক বিবাহ আসর যে অন্য রকম হবে তা নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন।
প্রথমে অতিথি আপ্যায়নে মাটির ভাঁড়ে চা, খাবারের মেনুতেও রাসায়নিক সার ঔষধ কীটনাশক ছাড়া মাছ মাংস আনাজ মশলাপাতি সবকিছু।
রাসায়নিক চলতি কৌটো ভর্তি সিঁদুরে নয়, সিঁদুর দান পর্যন্ত হলো প্রাকৃতিক এক ফল দিয়ে।এই গাছের ফল ঠোঁটে, সিঁদুর, কুমকুম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ভেষজ রং হিসেবে বোঁদে, জিলিপি, জ্যাম, জেলি, আইসক্রিম, কেক বা এই জাতীয় খাবারে এটি ব্যবহার করা যায়। আবির তৈরিতেও সহজে ব্যবহার করা যায়। দক্ষিণ আমেরিকায় এই গাছগুলোর ফলের ব্যবহার সব থেকে বেশি।
এই গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল বিক্সা অরিলেনা। ভেনেজুয়েলা ও আমেরিকায় গাছটি আনোত্তো নামে পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার গাছ বলেই মানুষ একে চেনে। আমাদের দেশেরেই অন্য রাজ্যে কোথাও একে সিঁদুরি গাছ নামে চেনে। রীতিমতন গোটা একটি করে ফল উপহার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে আমন্ত্রিতদের বোঝানো হচ্ছে তার উপকারিতা সম্পর্কে।
সরকারি বিবাহ আইন মেনে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার আগে নিজেরাই পাঠ করলেন শপথ বাক্য। আমন্ত্রিত সকল কে সাক্ষী রেখে নিজেরা অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন পরিবেশ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, নিয়মিত রক্তদান, মরনোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা এবং বিজ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কোনরকম কুসংস্কারকে প্রশ্রয় না দিয়ে আগামীর পথ চলার শপথ বাক্য পাঠ করলেন তারা।
এ প্রসঙ্গে আমন্ত্রিতরা জানালেন কিছু সংখ্যক মানুষও যদি সকলেই এ ধরনের আয়োজন করে থাকেন তাহলে বুজরুকিতে ঠকতে হবে না অনেকেই।
নবদম্পতিরা জানালেন, মানসিক ভাবে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছি ইতিমধ্যেই, বিবাহের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। তবে পাত্র রঘুনাথ অবশ্য শশুর বাড়ির বিয়ের আয়োজনের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে চান বউভাতে। সেখানে বিবাহ মন্ত্র পাঠে মহিলাদের কিভাবে প্রতি পদে পদে অপমান করা হয় তা ভিডিও আকারে প্রকাশিত করতে চান আমন্ত্রিতদের মাঝে। সকলেই যে ভালোভাবে নেবে না বিশেষত বয়স্ক প্রবীণ মানুষেরা তা জানা পাত্র রঘুনাথের। তাই তিনি তাদের ভাবাবেগে আঘাত না দিয়ে লোকাচারে কিছুটা নিয়ম শিথিল করেছেন সামান্য কয়েকটি বিষয়ে।