মলয় দে নদীয়া:- রামায়ণ রচনা করেন বাল্মিকী, কিন্তু রামায়ণের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কবি কৃত্তিবাস। বালি কান্ড, অযোধ্যা কান্ড, কিস্কিন্ধ্যা কান্ড, সুন্দরা কান্ড, লংঙ্কা কান্ড, উত্তরাকাণ্ড এই কয়েকটি ভাগে বিভক্ত।
তার জন্ম সাল সম্পর্কে নানান অভিমত থাকলেও আনুমানিক 381 খ্রিস্টাব্দ এবং মৃত্যু 1461 সাল হিসেবে ধরা হয়। তাঁর আত্মপরিচয় সম্পর্কে তিনি লিখেছেন “আদিত্যবার শ্রীপঞ্চমী পূণ্য মাঘ মাসে,
তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস”।
আরো কিছু লেখা থেকে জানা যায় তার পিতার নাম বনমালী মাতা মালিনী, ছয় ভাই যার মধ্যে এক বৈমাত্রেয় বোনও ছিলেন। তবে কবি কৃত্তিবাস ওঝার, পদবীটি লোকমুখে বিকৃত হয়। মূলকথা”মুখুটি” (মুখোপাধ্যায়) কথাটি থেকে ।
তিনি রাঢ় দেশীয় ব্রাহ্মণ।
বিভিন্ন ভাষায় রামায়ণের অনুবাদ হলেও বাংলায় অনুবাদ সর্বশেষ্ঠ বলে মানেন পৃথিবীর সকল কবি সাহিত্যিকরা। তবে এতেও বেশ কিছু সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করেন অনেকে, তাদের মত আক্ষরিকভাবে নয়, ভাবাবেগে পদ্যাকারে অনেক বিষয় বিয়োজিত এবং সংযোজিত হয়েছে।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কবি রামায়ণের অনুবাদ বাদেও শ্রীরাম পাঁচালীর রচয়িতা।,
তবে সে সময়ের রামায়ণ অনুবাদের মূল পান্ডুলিপি, এমনকি পরবর্তীতে প্রকাশিত দুটি প্রকাশনার নিদর্শনও পাওয়া যায় না ভারতের জাতীয় লাইব্রেরীতে। অনেকেই অনুমান করেন অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান জিনিসপত্রের মত পরাধীন ভারত থেকে ইংরেজদের অধীনস্থ হয়, তবে এক্ষেত্রে সে সময় চন্দননগরে ফরাসিদের উপনিবেশ স্থাপিত ছিলো এবং জলপথে যাতায়াত চলত তাই বর্তমান ফ্রান্সে একটি মুদ্রণের সংরক্ষণ আছে বলে খোঁজ খবর পাওয়া গেছে।
স্বাধীনতার পরবর্তী কালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে হাজার 1960 সালে ফুলিয়ায় তার জন্মভিটেতে এক বিঘে জমি একোয়ার করে গড়ে উঠেছিলো কৃত্তিবাস এবং রামায়ণ সম্পর্কে পরবর্তীতে নানান কবি সাহিত্যিকের লেখা তথ্য সংগ্রহশালা। আর সেই সময় থেকে মাঘ মাসের কোন একটি রবিবার ধরে তাঁর জন্ম দিবস পালিত হওয়া উপলক্ষে বসে মেলা।
কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও মূল পান্ডুলিপি বা পরবর্তীতে প্রকাশিত দুটি খন্ড উদ্ধারের কোনরকম সদিচ্ছা বিগত বা বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি বলেই অভিমত পোষণ এবং পোষণ করেন কবি সাহিত্যিকগণ। তবে 1802-03 সালে শ্রীরামপুর থেকে সর্বপ্রথম 5 খন্ডছ মুদ্রিত হয়, এরপর জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের সম্পাদনা 1830-34 সালে দুই খন্ডে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় বলেই সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে। সম্প্রতি কয়েক বছর আগে, আধুনিক মাইক্রো ফিল্মের মাধ্যমে একটি সংস্করণ তাঁর কাব্য রচনাস্থান নদীয়ার ফুলিয়ায় তার সমাধিস্থলে গড়ে তোলা সংগ্রহশালায় সুরক্ষিত আছে। মূল পান্ডুলিপি উদ্ধারে বিষয়ে বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন, বিষয়টি ভারত সরকারের অধীনস্থ মন্ত্রকের, তবুও ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা চালাবো।
সংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, আগামী লোকসভা অধিবেশনে বিষয়টি ভারত সরকারের বিভাগীয় মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।
কথিত শান্তিপুর এবং ফুলিয়া স্টেশন এর মধ্যবর্তী কবি কৃত্তিবাসের জন্ম ভিটায় তার জন্মতিথিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন তৎকালীন সময়ে সারা রাজ্যের খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিকরা। আর সেই কারণেই পূর্ব রেল স্থাপনের পর ওই এলাকায় ট্রেন দাঁড়াতো আগতদের পৌঁছানোর জন্য, স্টেশন না থাকার কারণে ট্রেন থেকে বেঞ্চের উপর নেমে মাটিতে পদার্পণ করতেন তারা। একবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে একটি শুভেচ্ছা বার্তা আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন। যেটা পরবর্তীকালে বইয়ের পৃষ্ঠায় ছাপা হলেও মূল লেখাটিরও কোন হদিস আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।