সোশ্যাল বার্তা : নদীয়া জেলার প্রাণকেন্দ্র কৃষ্ণনগরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে জলঙ্গী নদী। কিছু মানুষের উদসীনতায় এই জলঙ্গী নদী প্রায় স্রোতহীন হয়ে পড়ছে। বাঁধাল তার গতিকে রুদ্ধ করে দিয়েছে।
দীর্ঘ ৭ বছর ধরে মৎস্যজীবীরা বাঁধাল এর জন্য হয়েছেন সর্বহারা, কেউবা পেশা পরিবর্তন করে চলে গেছেন ভিন দেশে অথবা মৎসজীবিকা ছেড়ে হয়েছেন জনমজুর। নদীয়ার চর শম্ভুনগরের বাঁধালটি কে ঘিরে কৃষ্ণনগরের নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠন “জলঙ্গী নদী সমাজ” দেড় বছর ধরে অনেক আন্দোলন অনেক ডেপুটেশন, চিঠি দেওয়া, গ্রামে শহরে সচেতনতা প্রচার এর পর প্রশাসনের তৎপরতায় গত ৩০শে নভেম্বর ২০২১ সকালে চর শম্ভুনগরের সেই বাঁধাল তুলে দেওয়া হয়।
উপস্থিত ছিলেন সদর মহকুমাশাসক,ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক , মৎস্য দপ্তর, পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। উপস্থিত ছিলেন নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠন “জলঙ্গী নদী সমাজ” ও “সেভ জলঙ্গী” সংগঠনের সদস্যরা।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বাঁধাল তোলার বিভিন্ন কর্মসূচী আর সোশ্যাল মিডিয়াতে লাগাতার প্রচার, মৎস্যজীবীদের মনোবল আগের থেকে অনেক বাড়িয়ে তোলে, আর বর্তমান প্রশাসনের সদিচ্ছা হাজার মৎস্যজীবীর মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়।
এলাকার মৎসজীবী পরিতোষ হালদার, জয়দেব হালদার প্রশাসন ও জলঙ্গী নদী সমাজ সহ একাধিক সংগঠন কে কৃতজ্ঞতা এবং অভিনন্দন জানান।
“জলঙ্গী নদী সমাজ” এর পক্ষ থেকে ঐ দিনই নদীয়া ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপার অফিসে গিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আরো বাকি নদী বাঁধাল গুলো তুলে দেওয়ার জন্য চিঠি জমা করেন।
“জলঙ্গী নদী সমাজ” এর পক্ষে কৌশিক সরকার জানান দিনে দিনে সিন্ডিকেট রাজে পরিণত হতে চলেছে এই বাঁধাল ব্যবসা, গুরুত্বপূর্ণ শুধুমাত্র জলঙ্গী নদী নয়, চূর্ণী, মাথাভাঙ্গা আরো অনেক নদীর বুকে একই কাজ হচ্ছে, এগুলোকে অবিলম্বে তুলে দিতে হবে।
এ পি ডি আর এর পক্ষে অমিতাভ সেনগুপ্ত বলেন জলঙ্গী নদীর বুকে বড়আন্দুলিয়ার কাছে নদীর বুক সম্পূর্ণ আটকে বসানো বাঁধালটির ‘ডাক’ নেওয়া হচ্ছে। জলঙ্গীর বুকে বাঁধাল দেওয়ার কাজটি করে বীরপুরের কিছু প্রভাবশালী। ‘বীরপুর’ এর বাঁধালে হাত আছে স্থানীয় দুষ্কৃতীদেরও। তারাই আসল লাভের গুড় খান। ছোট পুঁজির মালিক, যারা বিভিন্ন জায়গায় বাঁধালের ‘লিজ’ নেন তারা নাকি জানেনই না যে ‘বাঁধাল’ দেওয়া অবৈধ। প্রশাসনকে এগুলো কড়া নজর দিতে অনুরোধ জানান।
স্থানীয় সূত্রে খবর হাতিশালা, রাধানগর পাবনা পাড়া, বীরপুর জামতলা, হাটরাঘাট-তেঘড়ি, সুখসাগর ঘাট, বাঙাল ঝি, তেহট্ট সহ বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই বাঁধাল দেওয়া হয়েছে। তেহট্ট তে দীর্ঘ দিনে ধরে নদী নিয়ে কাজ করা আরো একটি সংগঠন জলঙ্গী নদী বাঁচাও কমিটির ডা: প্রলয় ভট্টাচার্য্য লাগাতার আন্দোলন করে চলেছেন। আগেই তেহট্ট র প্রশাসনের কাছ থেকেও মিলেছিলো আশ্বাস এবং সেই মতো গত দিনে ৪ ও ৫ই ডিসেম্বর তেহট্ট মহকুমা প্রশাসন জলঙ্গী নদীর ওপর থেকে বাঁধল তুলে দিলেন।
কৌশিক সরকার আরো জানান ,বিগত দেড় বছর আগে এই “বাঁধাল” তোলার আন্দোলন শুরু হয়। জলঙ্গী নদী সমাজ এর সদস্যরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সার্ভে, জল পরীক্ষা, সচেতনতা শিবির, সাইকেল যাত্রা , পদযাত্রা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা , ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া, ডেপুটেশন দেওয়া, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তথ্যানুসন্ধান, ওয়েবিনার, পথ নাটিকা সংগঠিত করা, বাদকুল্লা থেকে টাইগার হিল সাইকেল যাত্রা, অভিনবত্ব পূর্ণ সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার, বাঁধাল তোলার গান তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন বাংলা তথা সর্বভারতীয় নদী ও পরিবেশ সংগঠনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে বাইরের কর্মসূচিতেও অংশ গ্রহণের সাথে সাথে মৎস্যজীবীদের মনোবল বাড়িয়ে তোলার মতো কাজ করে গেছে নিভৃতে।
“কিশোর বাহিনী”, “নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও” (কলকাতা),এ পি ডি আর, সেভ জলঙ্গী ,পরিবেশ বান্ধব মঞ্চ(বারাকপুর) “কৃষ্ণনগর ঐকতান”, নবদ্বীপ “কর্তব্য”, কৃষ্ণনগর সিঞ্চন, বগুলার রুটি ব্যাংক এবং “অরনী” নাট্য সংস্থা ছাড়াও আরো অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।