দেবু সিংহ,হরিশ্চন্দ্রপুর: ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিয়ে চলছে চিকিৎসা। কিন্তু বাড়তি ওষুধ এর খরচ কোথা থেকে আসবে। এই চিন্তায় ঘুম উড়েছে মালদহের কুশিদা এলাকার পরিযায়ী শ্রমিক মামুনের। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও বাড়তি ওষুধের খরচ তুলতে এলাকার বাসিন্দাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। তবে এই দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে এই অঞ্চলের উপ-প্রধান নুর আজম। তুলে দিয়েছেন বাড়তি ওষুধের খরচের টাকা। কিন্তু তাতেও সম্পূর্ণ টাকা উঠছে না। লাগবে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার বেশি। এত টাকা আসবে কোথা থেকে এই চিন্তাই কুরে কুরে খাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক মামুনকে। ছেলেকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকের। যদিও পরিযায়ী শ্রমিক মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছেন কুশিদা অঞ্চলের উপ-প্রধান মোহাম্মদ নুর আজম। তিনি ইতিমধ্যেই মামুনের হাতে চিকিৎসার ওষুধের জন্য কিছু আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দাদের যাতে মামুনের পাশে দাঁড়ান এলাকার বাসিন্দা। না হলে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে অসহায় মামুনের ছেলে।
মামুনের দুই ছেলে দুই মেয়ে। সংসার চালাতে পাঁচ বছর ধরে সপরিবারে আজমিরে থাকেন। লকডাউনেও সেখানে ছিলেন। কুশিদায় বাড়ি বলতে ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি। আবেদন করেও আবাস যোজনায় ঘর মেলেনি । সম্প্রতি আজমিরে বড় ছেলে নাসিরুদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেখানে তার চিকিৎসা করার পরেই তার ক্যানসার ধরা পড়ে। কুশিদা এলাকার উপ-প্রধান নুর আজমের প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পাওয়া যায় এবং সেটা দিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। কিন্তু চিকিৎসা যত এগোতে থাকে শুরু হয় ওষুধের জন্য বাড়তি খরচের চিন্তা। হিসাব করে দেখা যায় ওষুধের খরচ লাগবে ৪ লক্ষ টাকার বেশি। কিন্তু এই টাকা আসবে কোথা থেকে। লকডাউনে কাজ হারিয়েছে মামুন। জমানো টাকা যা ছিল গত দু’বছরে বেকার অবস্থায় সংসার চালাতে গিয়ে পৌঁছে গিয়েছে। এখন কোন আর উপায় নেই। এদিকে ওই পরিযায়ী পরিবারটি যাতে ওষুধের খরচ জোগাড় করতে পারে তার জন্য নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মোহাম্মদ নূর আজম। এমনকি ওই পরিযায়ী শ্রমিকের হাতে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য পর্যন্ত তুলে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে দিয়েছেন সাহায্যের আশ্বাস। এমনকি এলাকার লোক কেও আহ্বান জানিয়েছেন যাতে ওই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।
এ প্রসঙ্গে কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মোহাম্মদ নূর আজম বলেন “ওরা রোজগারের জন্য সপরিবারে আজমিরে থাকেন। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার। এর আগে ওর ছেলের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই চিকিৎসা করাতে গিয়ে আরও টাকার প্রয়োজন। এখন কিভাবে টাকা উঠবে তার ব্যবস্থা যাতে এলাকাবাসী কিছুটা করে সেই প্রচেষ্টায় আমরা করছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে এই অসহায় পরিবারের শ্রমিকের পাশে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করে।
বাবা মামুন জানান, “ছেলের ক্যানসার ধরা পড়েছে। টাকা পয়সা কিছুই নেই। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিয়ে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু ওষুধের খরচ কোথায় পাবো। এই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। এখন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন যাতে আমাদের বাড়তি ওষুধের খরচ করে সাহায্য করে তাহলে ছেলেকে বাঁচাতে পারবো।
পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে মামুন ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর চিকিৎসা কেন্দ্র ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে এটাই তারা ভেবে পাচ্ছেন না। প্রশাসনের সাহায্যের আশায় বসে আছে মামুনের পরিবার।