শারদোৎসব উপলক্ষে নদীয়ার শান্তিপুরে হারিয়ে যাওয়া পুতুল নাচ

Social

মলয় দে, নদীয়া:- শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, সামাজিক অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলি। যার মধ্যে দুর্গাপুজো অন্যতম।

দীর্ঘদিন করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষ ছিলো গৃহবন্দী, কর্মহীন। তৃতীয় ঢেউয়ের গতি প্রকৃতি দেখে ফাঁক বুঝে উপনির্বাচনের তোরজোড় চলছে। সাধারণ মানুষও একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চলেছে, আরে সেই সূচনালগ্নে এসে দাঁড়িয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা।
মৃৎশিল্পী প্যান্ডেল, ঢাকি, থেকে শুরু করে মেলার দোকানদার, জামা কাপড়ের দোকান রেস্তোঁরা, হোটেল সকলের অর্থনৈতিক সমতা ফেরে এ ধরনের ধর্মীয় উৎসবে। শুধু কি এঁরাই? সমাজের সকল অংশ একঘেয়েমি কাটিয়ে মানসিক পরিতৃপ্ত হয় । বিভিন্ন বনেদি বাড়ি বারোয়ারির দুর্গা পুজো পরিক্রমা করতে সাবেকি ঐতিহ্য গিয়ে পুতুল নাচের দেখা পেলাম শান্তিপুর ডাবরেপাড়া বুড়ো বারোয়ারি পুজো মণ্ডপে। এবারে তাদের আড়াইশো বছরে পদার্পণ, গুপ্তিপাড়া বারোয়ারী গঠনের পর তাদের বারোয়ারি রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় বারোয়ারি হিসাবে দাবি করে থাকেন পুজো উদ্যোক্তারা। নানারকম ঐতিহ্যের মধ্যে,, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাদের কাছে অন্যতম। পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে মহিলাদের শঙ্খ বাজানো ধুনুচি নাচ প্রতিযোগিতা কচিকাচাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রা বাউল গান এখনো বজায় রেখে চলেছেন তারা । এবছরের নদীয়ার বগুলা থেকে পুতুল নাচের দল নিয়ে এসেছেন তারা। এলাকার কচিকাঁচা থেকে শুরু করে মাঝবয়সী বা প্রবীণরা সন্ধ্যা থেকেই পুজোমণ্ডপে ভিড় জমিয়েছেন তা দেখার জন্য।

হারমোনিয়াম বাজিয়ে নবদ্বীপের শ্রীকৃষ্ণ দেবনাথ দ্বৈতকণ্ঠে বিভিন্ন চরিত্রের কথোপকথন, ঢোলক কিবোর্ড এবং পার্কাসন বাজিয়ে বাকি তিনজন তা আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। পুতুলনাচ দলের মালিক অমূল‍্য রায় ১৬টি বিভিন্ন চরিত্রের পুতুল অপর দুজনের হাতে জোগাড় পর্যায়ক্রমে, আর সেই দুজন দুই হাতে দুটি করে পুতুল নিয়ে সবকিছুর সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে, ফুটিয়ে তুলছেন সমগ্র বিষয়টি। রামায়ণ মহাভারত বা পুরাণের কোনো কাহিনী, সামাজিক রাজনৈতিক সাংসারিক বিভিন্ন মজার কৌতুক ও পরিবেশিত হচ্ছে স্বাদবদলের জন্য। অমূল্য বাবু জানান ৭ জন সহযোগী নিয়ে তিন ঘন্টার সমগ্র অনুষ্ঠানের ছটি পৃথক ঘটনা তারা বর্ণনা করে থাকেন । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর থেকে সম্মান এবং সাম্মানিক অনেকেই পেয়েছেন তার দলের সদস্যরা। তবে দীর্ঘ লকডাউনে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল বিভিন্ন মেলা খেলা অনুষ্ঠান। তিনি দুঃখ করে বলেন এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অবশ্য, এ পেশায় আসতে চায় না।

একদিকে হারমোনিয়াম বাদক অন্যদিকে হরবোলা কণ্ঠশিল্পী সুধারাম ধারা জানান ১৯৮৪ সালে থাকে এই পেশার সাথে যুক্ত। চাষাবাদ করার মাঝেই সঙ্গীত চর্চা এবং সংলাপ চর্চা করে থাকেন। খুব বেশি ভাড়া না হলেও, বাপ ঠাকুরদার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আজও নেশার মতন ছুটে যান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মালিকের ভাড়া ধরা অনুষ্ঠানে।

Leave a Reply