দুর্গা মায়ের বরণ ডালায় থাকে আলতা সিঁদুর দর্পণ ! ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় মায়ের পায়ে আলতা পরানোর পর ঠাকুর দালানে বসে মহিলাদের আলতা পরার রীতি এখন প্রায় অতীত

News

মলয় দে নদীয়া:- ব্রহ্মবৈবরত পুরাণের মতে, মহাভারতের সময়কাল থেকে অর্থাৎ প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে এই শাঁখার ব্যবহার শুরু হয়। সেই সময় শঙ্খাশূর নামে এক অত্যাচারী অসুরের তান্ডবে দেবলোক অশান্ত হয়ে উঠে। সেই সময় সকল দেবতারা মিলে ভগবান নারায়ণের দ্বারস্থ হন। নারায়ণ সেই সময় শঙ্খাশূর-কে বধ করে দেবতাদের রক্ষা করেন। এদিকে শঙ্খাশূর-এর ধর্মপরায়ণ স্ত্রী তুলসী স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় প্রার্থণা শুরু করেন। তুলসীর প্রার্থণায় সন্তুষ্ট হয়ে নারায়ণ শঙ্খাশূর-এর হাড় দিয়ে শাঁখা তৈরি করেন। সেই থেকেই হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের স্বামীর মঙ্গলকামনায় এই শাঁখা পড়ার প্রচলন শুরু হয়েছে বলে মনে করা হয়।

সেই রকম কপালে সিঁদুর ব্যবহারেরও কিছু বিধি শাস্ত্রের মাধ্যমে জানা যায়৷ শাস্ত্র মতে, তর্জনি দিয়ে সিঁদুর পরলে মানসিক শান্তি বৃদ্ধি পায়। মধ্যমা ব্যবহার করলে আয়ু বৃদ্ধি পায়। প্রাচীন কালে হলুদ গুঁড়ো দিয়ে সিঁদুর তৈরি হত। তার পরে তাতে লাল রং মিশিয়ে সিঁদুদের গাঢ়ত্ব বৃদ্ধি করা হতো। শাস্ত্রমতে লাল শক্তির প্রতীক। শাস্ত্র অনুযায়ী মানব শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবতা অবস্থান করেন। যেমন কপালে অধিষ্ঠান করেন স্বয়ং ঈশ্বর ব্রহ্মা। লাল কুঙ্কুম ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। আর সেই কারণেই প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু মহিলারা শক্তির প্রতীক এবং প্রসাধনী হিসেবে সিঁদুরের ব্যবহার করেন। আলতাও ঠিক সেই রকমই শুভ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দুর্গা ষষ্ঠী হোক বা অন্য কোন পূজা-অর্চনা আলতা পরার রেওয়াজ বহু প্রাচীন। একসময় গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পড়শীরা ভিড় জমাতো আলতা পরার জন্য। সই সখা বান্ধবী যে বয়সের যাই হোক না কেনো, যে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে আলতা সিঁদুর দেওয়ার রীতি এখন অতীত। অনেকে অবশ্য বিভিন্ন চর্ম রোগের যুক্তি দিয়ে থাকেন আলতা সিঁদুর না পড়ার পেছনে। তবে তা অবশ্যই কেমিক্যালযুক্ত আলতা সিঁদুর। কিন্তু প্রবীণ মহিলারা কিন্তু তা মানতে নারাজ।

তবে দুর্গা মায়ের সাজ সজ্জার মধ্যে বরণ ডালায় আলতা সিঁদুর দর্পণ চিরুনি চুল বাধা ফিতে সুগন্ধ দ্রব্য সবকিছুই থাকে। এমনকি ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় মায়ের পায়ে আলতা পরানোর পর ঠাকুর দালানে বসে মহিলাদের আলতা পরা ধর্মীয় রীতির মধ্যেই পড়ে।

Leave a Reply