মলয় দে, নদীয়া:- কর্মক্ষেত্র হোক বা ভ্রমণ! দূরের পথ হোক বা কাছের পথ, গন পরিবহনের মধ্যে, বিশেষত ট্রেন পথে একঘেয়েমি দূরে সরিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য যাত্রীদের মানসিক পরিতৃপ্তি ঘটে গান শুনিয়ে ভিক্ষা করা প্রতিভাবান গুণী শিল্পীদের। যার মধ্যে অধিকাংশই দৃষ্টিহীন। তবে উপার্জনের উদ্দেশ্যেই মূলত ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছেন অনেকেই । তবে ব্যস্ততার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই, তা গভীরভাবে শুনে বোধগম্য করা যায় না, তবে এমন কিছু কণ্ঠ আছে যা নামিদামী শিল্পীদের মতই কণ্ঠস্বর মনে গেঁথে বহুদিন বাদেও। ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু করে, এখনও পর্যন্ত এরকম অনেক মানুষ কর্মহীন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন!
এই রকম এক প্রতিভা নদীয়া জেলার তাহেরপুরের ষাটোর্ধ্ব মনীন্দ্র বিশ্বাস যিনি ছোটবেলা থেকেই জন্মান্ধ। ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে, রোজগারের প্রধান উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, ট্রেন পথে গানশুনিয়ে উপার্জন। তবে প্রতিদানে গান শোনানোর উদ্দেশ্যে তিনি, রেডিওর আকাশবাণী বা অন্যান্য এফএম রেডিও স্টেশনের প্রচারিত পুরনো দিনের গান শুনতেন। সংগীতের প্রতি মনোজ্ঞ এই প্রতিভাবান শিল্পী, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মান্না দে এরকমই ক্লাসিক্যাল শিল্পীদের গাওয়া গান অভ্যাস করতেন নিয়মিত। পথে সচরাচর ক্লাসিক্যাল গানের, কণ্ঠস্বর শোনা যায় না। ব্যবসায়িকভাবে গলার উপর অত্যন্ত জোর দিয়ে এবং দীর্ঘ অনুশীলনের উপর আস্থা রাখেন না অনেকেই, তাই আধুনিক প্রযুক্তির উপর ভরসা করে ট্র্যাকে মিউজিক চলার সাথে গলা মিলান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিল্পীরা।
মনীন্দ্র বাবু কিন্তু, হারমোনিয়ামের স্বরলিপি মিলিয়ে, সুর তাল ছন্দের সঠিক ব্যবহার করে, অত্যান্ত আন্তরিকতার সাথে পুরনো গান এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চাকদার বিপাশা বসু হোক বা রানাঘাটের রানু মন্ডল সহজেই বাজিমাত করেছেন , আধুনিক জনপ্রিয় সিনেমার গান করে। কিন্তু কিন্তু সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও আঁকড়ে রয়েছেন পুরনো গানেই।